অনাবিল আনন্দ ছড়াক খুশির ঈদ

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০১৯, ২৩:৪১

আরিফুর রহমান

বছর ঘুরে আবার এসেছে আনন্দের উপলক্ষ- ঈদ। ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়ামসাধনার শেষে এখন মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ আয়োজন। এরই মধ্যে পবিত্র শাওয়াল মাসের বাঁকা চাঁদের সম্ভাষণ মিলেছে। এই বাঁকা চাঁদে করে ধরায় নেমেছে ঈদের খুশি। সবার হৃদয়ে অনুরণিত হচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের শ্বাশত আনন্দ আবাহন সংগীত- ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’।

খুশির এই উৎসবে আমাদের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকারসহ শুভানুধ্যায়ীদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ঈদ মোবারক।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হলো রোজা, আরবিতে যাকে বলে সাওম। হিজরি রমজান মাসজুড়ে চলে এই সিয়াম সাধনা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা- মোটা দাগে এই ব্রত পালনকেই রোজা বলি আমরা। কিন্তু আসলে শুধু উদর আর রসনাকে বিরত রাখাই রোজার প্রকৃত মাহাত্ম্য বোঝায় না। এর সঙ্গে চোখ, মুখ, কানকে সংযত রাখা, সব ধরনের রিপু থেকে মুক্ত রাখতে হয় নিজেকে। অর্থাৎ একজন খাঁটি ইমানদার মানুষ হিসেবে নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই রোজার ফজিলত নিহিত। এই মাসে দান-খয়রাতকেও উত্তম ফজিলত হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি হয় সবার মাঝে।

ঈদ নিয়ে আসে শান্তি আর আনন্দের সওগাত। ধনী-গরিব সবার ঘরে ঈদ উৎসবের রোশনা ছড়ায়। গৃহিণীরা পরিবারের স্বজন আর অতিথিদের জন্য ফিরনি-পায়েস পোলাও কোরমা প্রস্তুত করেন। মেহেদিতে হাত রাঙায় কিশোরী-তরুণীরা। 

ঈদের দিন সকালে উঠে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নতুন জামা-কাপড় পরে দলে দলে যাবেন ঈদগাহে। সেখানে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে সমর্পণ করবেন আল্লাহর দরবারে। এরপর ছোট-বড় ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে কোলাকুলির মধ্য দিয়ে ঘোষিত হবে সাম্যের বারতা- ‘আজ ভুলে যা সব হানাহানি, হাত মেলা হাতে’।

অসহায়-দরিদ্রের সহায় হতে, জীবনকে বুঝতে, মানবজীবনকে নতুন করে রাঙাতে ফিরে ফিরে আসে ঈদ। সব সংকীর্ণতা ও ভেদাভেদ ভুলে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার উৎসবে মিলিত হতে হবে সবাইকে। কেননা ঈদের মতো উৎসব বর্ণিল হয়ে ওঠে সমাজের সবার অংশগ্রহণে। ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই যেন এই উৎসবে শামিল হতে পারে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। ঈদ আমাদের জীবনে যে ঐক্য ও শুভবোধ জাগ্রত করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনে।

ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আর নাড়ির টানে ইতিমধ্যে অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ রাজধানী ছেড়ে জন্মভিটায় গেছেন। আরও অনেকে যাবেন। রাজধানীসহ নগর-বন্দরের কর্মজীবী ও নাগরিকদের বাড়ি ফেরার সময় প্রতিবছর বেশ ভোগান্তির সৃষ্টি হয় যানবাহন অপ্রতুলতা আর রাস্তার দুরবস্থার কারণে। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার পরও অনেক মানুষকে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। তবে এবার ট্রেনের চিত্র খুব একটা না পাল্টালেও বাসযাত্রায় কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল বলেই মনে করছি আমরা। সামনে ছুটির দিনগুলো যেন নির্ঝঞ্ঝাটভাবে কাটাতে পারে সবাই, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর ঈদের ছুটিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্জন থাকে। এই সুযোগে বাড়ে চুরির ঘটনা। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা নাগরিকরা নিশ্চয়ই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে এই সময়ে, যাতে কারও সহায়-সম্পদ খোয়া না যায়।

আশা করি সবার জন্য আনন্দময় হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সবাইকে আবারও জানাই ঈদ মোবারক।