কার্ডিফ: যেখানে স্বর্গ নেমে এসেছে

দেলোয়ার হোসেন, কার্ডিফ থেকে
| আপডেট : ০৮ জুন ২০১৯, ২৩:৪৪ | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০১৯, ১৮:২৯

প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটারের লম্বা জার্নি শেষে বিজি শূন্য ওয়ান ফ্লাইটের বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট যখন স্পর্শ করলো তখন স্থানীয় সময় ঠিক চারটা। সিডিউল অনুযায়ী চারটাতেই পৌঁছানোর কথা ছিল। কে বলে বিমানের সময় জ্ঞান নেই? প্রায় ১২ ঘণ্টার দীর্ঘ জার্নি। কিন্তু কি আশ্চর্য আমার মধ্যে কোনো ভ্রমণ ক্লান্তি নেই? অবশ্য পাশের দুই সিট ফাঁকা থাকায় সারা পথ এসেছি নবাবের মতো শুয়ে আর ঘুমিয়ে। আমার তো ক্লান্ত হওয়ার কথাও নয়।

ক্লান্তি না থাকলেও অস্থিরতা কাজ করছিল প্রচণ্ড। ৮ তারিখ সকালে বাংলাদেশের ম্যাচ, আমাকে যেতে হবে কার্ডিফে। লন্ডন থেকে ৮ তারিখ সকালে গিয়ে ম্যচ ধরা কঠিন। তাই আগেই লন্ডন থেকে কার্ডিফ বাসের টিকিট কেটে রেখেছিলাম। হিথ্রো এয়ারপার্টের তিন নম্বর টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়বে ৬টা ২৫ মিনিটে। আমাকে তার অন্তত ১০ মিনিট আগে পৌঁছাতে হবে। আমি কি পৌঁছাতে পারব?

ইমিগ্রেশনে এসে দেখলাম লম্বা লাইন। শঙ্কা, অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল। কিন্তু হিথ্রোর ইমিগ্রেশন অফিসার ঢাকার মতো এ্যানালগ টাইপ নন। ঝটপট কাজ। লম্বা লাইন শেষ অল্প সময়ের মধ্যেই। লাগেজ সংগ্রহ করে বাস টার্মিনালে যখন পৌঁছালাম তখন সবে সোয়া ৫টা। হাতে লম্বা সময়। অহ, অযথা দুশ্চিন্তা করে প্রেসার ১০ ডিগ্রি বাড়িয়েছি।

হিথ্রো থেকে লন্ডন সিটির ভিক্টোরিয়া বাস স্ট্যান্ডে আসতে বেশি দেরি হলো জ্যামের কারণে। অফিস ছুটি হওয়ার কারণে লন্ডনের কোনো কোনো রাস্তায় এসময় কিছুটা জ্যাম থাকে। ভিক্টোরিয়া থেকে কার্ডিফ সাড়ে তিন ঘণ্টার রাস্তা। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া থেকে বাস ছাড়লো ৮টায়।

আসলে বাস ও ট্রেন জার্নির তুলনা হয় না। প্লেন জার্নিতে রোমাঞ্চ আছে, কিন্তু কোনো কিছু দেখার তেমন সুযোগ নেই। কিন্ত বাস, ট্রেনে বসে দুই পাশের দৃশ্য চোখ ভরে উপভোগ করে নিতে পারবেন। লন্ডন আগেও এসেছি। তবে লল্ডন আমার কাছে সবসময়ই নতুন, চকচকে। লন্ডনের রুপ লাবণ্যে আমি বিমোহিত। চোখ জুড়ানো লন্ডন সিটি পেরিয়ে বাস প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিত ছুটি চলেছে কার্ডিফের দিকে। চোখ জুড়ানো হাইওয়ে। দু’পাশে নাম না জানা বৃক্ষের সারি। সবুজ চারণভূমি। যেন স্বর্গ থেকে আরেকটা স্বর্গের দিকে যাচ্চি। পুরো ইউরোপটাই সবুজ আর সবুজ। ব্রিটেন যেন সেই সবুজের লিলাভূমি। এ কারণেই তো ব্রিটেন ‘সমূদ্রের বধূ’।

ইংল্যান্ডে রাত মাত্র ৭ ঘণ্টার মতো। ঘুমাতে ঘুমাতে রাত সাড়ে ১টা বেজে গেল। সকাল সাড়ে দশটায় ম্যাচ। আমাকে মাঠে পৌঁছাতে হবে ৯টায়। যেখানে ওঠেছি, সেখান থেকে স্টেডিয়াম হেঁটে যেতে লাগবে ২৫ মিনিট। ট্যাক্সিতে যাওয়া যায়। কিন্তা টাকা বাঁচাতে হাটার চেয়ে ভালো উপায় আর কি হতে পারে? আমি রওনা হলাম সাড়ে আটটায়। কিন্তু কি বিড়ম্বনা, স্টেডিয়ামের এসে দেখি ব্যাগে ল্যাপটপের চার্জার নেই! ভুল করে ফেলে এসেছি বাংলাদেশে।

ঢাকাতে যেখানে সেখানে ইলেকট্রনিক্স দোকান পাওয়া যায়। কিন্তু ধনী দেশের ব্যাপার স্যাপার অন্যরকম। সবখানে সবছিু মিলে না। আমাকে যেতে হবে সিটি সেন্টারে। আসা যাওয়া ৬০ পাউন্ড, চার্জারের দাম ২০ পাউন্ড।৮০ পাউন্ড গচ্চা ভুলের কারণে।

প্রেসবক্সে যখন নিজের সিটে বসলাম যখন খেলা সবে শুরু হয়েছে। এই কার্ডিফ আমার কাছে চেনা। আগেও কয়েকবার এখানে এসেছি। বিখ্যাত সোফিয়া গার্ডেনের মাঝে অবস্থিত ছোট কিন্তু সুন্দর স্টেডিয়ামটি। মাঠের চারপাশ সবুজে ঘেরা। গত রাতে এখানে বৃষ্টি হয়েছে। ভোরেও এক পশলা বৃষ্টি নেমেছে। এই মুহূর্তে আকাশের অবস্থা ভালো। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বাতাস বইছে গতিতে। দর্শকদের মতো কার্ডিফের স্বর্গীয় পাখিরাও যেন এমন কন্ডিশনের প্রতিক্ষায় ছিল। এখানে মনের সুখে প্রাণভরে ছুটোছুটি করছে শুভ্র পাখিরা। তারাও যেন উপভোগ করছে ২২ গজের এই ভদ্র লড়াই।

(ঢাকাটাইমস/৮জুন/ডিএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :