‘তারেক নাক গলায়, স্ট্যান্ডিং কমিটি নড়েচড়ে না’

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৯ জুন ২০১৯, ২১:১১
ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংকটের জন্য ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপিকেই দায়ী করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘সমস্যা হচ্ছে বিএনপির অতি বয়োবৃদ্ধ স্ট্যান্ডিং কমিটি৷ তারা নড়েচড়ে না৷ আর তারেক নাক গলায়৷’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সোমবার ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক আছে৷ আমরা বৈঠকে ফ্রন্টকে কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেব৷ কার্যক্রম না থাকলে জোট থাকে না৷ আর এখন যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা সোমবারের বৈঠকের মধ্য দিয়ে মিটে যাবে আশা করি৷'

নির্বাচনের আগে বিএনপি'র প্রাধান্যে আর ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়৷ বিএনপি ছাড়া এই জোটে গণফোরাম, নগারিক ঐক্য, জাসদ(রব) এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আছে৷

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বর ‘আগের রাতে ভোট ডাকাতির নির্বাচন' প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবি জানায়৷ তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপিসহ ফ্রন্টের যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা শপথ নেবেন না৷ সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি থেকে ছয় এবং গণফোরাম থেকে দুই এই আটজন নির্বাচিত হন৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে প্রথমে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের দুজন শপথ নেন৷ এরপর বিএনপি'র পাঁচজনও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে শপথ নেন৷ শুধু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেয়ায় বগুড়া-৬ আসন শূন্য হয়৷ তবে এই আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি আবার প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আর নারী সংসদ সদস্য কোটায়ও বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহানা রবিবার শপথ নিয়েছেন৷

এসব ঘটনায় গত মাসে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী ৮ জুনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগের হুমকি দেন৷ কিন্তু ঈদের আগের দিন ড. কামাল হোসেন তাকে পরবর্তী একটি বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললে তিনি মেনে নেন৷ সেই বৈঠক হবে সোমবার৷

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা লজ্জায় পড়ে গেছি, কোনো জবাব দিতে পারছি না৷ কারণ, শপথ নেয়াসহ আরও যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তা ফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে হয়নি৷ আমরা জানতে চাইলে নেতারা বলেন, তারা কিছু জানেন না৷ তাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয়৷'

ইকবাল বলেন, ‘নির্বাচনের পর নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করা হয়েছে৷ নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার কথা ছিল না তারা শপথ নিয়েছেন৷ আবার মির্জা ফখরুল সাহেব শপথ না নিলেও তার ছেড়ে দেয়া আসনে উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে৷ আমরা নতুন নির্বাচনের দাবি করে এই সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবনা বলেই উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছি৷ তাহলে বিএনপি আবার উপ-নির্বাচনে অংশ নেয় কীভাবে? পাঁচজন কেন শপখ নিলেন আর ফখরুল সাহেব কেন নিলেন না তাও আমরা জানি না৷ আমরা এসবের জবাব চাই৷ সোমবারের বৈঠকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব৷'

অন্যদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে জোটের শরিক নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়৷ এতে মান্না বিব্রত হন৷ তিনি এই প্রস্তাবকে জোটকে হেয় করা হিসেবে দেখছেন৷ তিনি বিএনপি'র প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন৷

বিএনপি যা বলছে

এসবের জবাবে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্তগুলো খুব দ্রুত নিতে হয়েছে৷ আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত কিছু রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এমপিরা শপথ নিয়েছেন৷ আমাদের উচিত ছিল ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাথে কথা বলা, তাদের জানানো৷ কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা সেটা পারিনি৷ সেমবারের বৈঠকে আমরা তা জানাবো৷ আশা করি ফ্রন্টের শরিকরা আমাদের কথা গ্রহণ করবেন৷ ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে৷'

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে শপথ নেননি৷ আর আমাদের এমপিরা যে কারণে শপথ নিয়েছেন সেই কারণেই আমরা বগুড়া উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছি৷ এই আসনটি ম্যাডাম খালেদা জিয়ার আসন৷'

ঐক্যফ্রন্টর অন্যতম নেতা, থিংক ট্যাংক ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘নানা সমস্যা ঐক্যফ্রন্টে আছে৷ এক পক্ষ প্রশ্ন করছে আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি, আবার শপথ নিলাম কেন? ভোটে যাচ্ছি কেন? আমার কথা হলো এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছি, তাহলে এই সরকারকে ট্যাক্স দিই কেন? এই সরকারের পাসপোর্ট নিই কেন? এগুলো আসলে মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হলো আমাদের কোনো তৎপরতা নেই৷ সরকার আমাদের মিটিং করতে পারমিশন দেয়না আর সেই অজুহাতে আমরাও কোনো কর্মসূচি দিই না৷''

‘আমরা সোমবার এসব নিয়ে বসব৷ কিন্তু বিএনপি'র কিছু ইনহেরেন্ট সমস্যা আছে৷ একটা হলো অতি বয়োবৃদ্ধ স্ট্যান্ডিং কমিটি, সহজে নাড়াচড়া করতে চায়না৷ ওদিকে তারেক সেখানে বসে থেকে অস্থির হয়ে গেছে, নাক গলাচ্ছে৷ এগুলোই ফ্রন্টের সমস্যার মূল কারণ৷’

তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অমানবিকভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে৷ তার জামিন একটার পর একটা আটকে দেয়া হচ্ছে৷ আর বিএনপি তার মুক্তির জন্য মিনিমাম কাজটাও করছে না৷ বসে থেকে হঠাৎ টেলিভিশনে বক্তৃতা দেয়৷' –ডয়েচে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/০৯জুন/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :