কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিতে মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে: খলীকুজ্জমান

প্রকাশ | ১০ জুন ২০১৯, ২০:৩৩ | আপডেট: ১০ জুন ২০১৯, ২১:৪৯

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস

ধানসহ কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে একটি স্বায়ী ও শক্তিশালী মূল্য কমিশন গঠন করারর পরামর্শ দিয়েছেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, কৃষককে সংগঠিত করার পাশাপাশি মজুদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। এ ছাড়া নীতি গ্রহণ ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আরো সমন্বয় প্রয়োজন।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্বাধীনতা পুরস্কার জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘কৃষিতে লাকসাই যান্ত্রীকিরণ করতে হবে। বলেন, সরকার সরবরাহর দিকে যতটা না সচেতন, চাহিদা ব্যবস্থাপনায় তেমন সচেতন না। এখানে মোটেই কাজ করা হচ্ছে না। প্রয়োজন একটি শক্তিশালী মূল্য কমিশন গঠন করা। এটা গুরুত্বপূণ। দেখা যায় এখন কম ফসল উৎপাদন কম হলে দাম বেশি হয়, আবার যখন উৎপাদন বেশি হয় তখন দাম কমে যায়। উৎপাদন ভালো হলে কিভাবে এর ব্যবস্থাপনা করতে হবে সে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, তা না হলে প্রতি বছর যখন সমস্যা হবে তখন হইচই হবে। আবার কিছু দিন পর ভুলে যাবো। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা বাড়াতে হবে। টেকশই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। কৃষকে সংগঠিত  করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষক যেন নিজেরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফসল তোলা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ করতে পরে। এটা সমবায়ের মতো করতে হবে বা একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে সেটা না। তারা নিজেদের স্বার্থেই করবে। আর এখন ধান কেনা বাড়াতে হবে। এখন সরকার ৫ শতাংশ ধান কিনে এটা ১৫ শতাংশ কিনলে আবশ্যই বাজারে প্রভাব ফেলবে। কৃষক উপকৃত হবে।
 
কৃষিতে যান্ত্রীকিকণের বিষয়ে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, কৃষিতে ব্যপক যান্ত্রীকিরণ করতে হবে। যান্ত্রীকিরণ লাকসাই হতে হবে। দেখা গেল এমন যন্ত্র আনা হল যা কৃষক ব্যবহারই করতে পারে না, তাহলে কিন্তু সুফল পাওয়া যাবে না। কৃষকদের কৃষি যন্ত্রব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে কৃষি শ্রমিক যেন বেকার না হয়ে পড়ে। কোথাও হয়তো কৃষি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তবে তাদের জন্য কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আগে এসব বিষয়ে হিসেব করতে হবে। এর পর কাজ করতে হবে।

মধ্যসত্ত্বভোগিদের ব্যপারে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, মধ্যসত্ত্বভোগিদের প্রয়োজন আছে। কারণ চর কুররি মুকরির যে কৃষক পাঁচমণ আলু উৎপাদন করে তিনি কিন্তু এ আলু ঢাকায় আনতে পারবে না। এটা মধ্যসত্ত্বভোগিরাই আনবে। তবে তারা যেন কৃষকে কম দাম না দিতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু কিছু চাতাল মালিকরা এখন নাননভাবে কৃষককে হয়রানি করে। তাদের শাস্তির বিধান করলে এটা হবে না। এটা করা গেলে টেকসই উন্নয়ন হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে উন্নয়ন হবে।  

কৃষিতে ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি অর্থনীর একটা প্রধান খাত। কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হয় উপকরণের উপর ও সরাসরি। এ ভর্তুকি চলবে। ভর্তুকির টাকা কৃষক যেন সহজে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি যন্ত্রাংশ কেনায় কৃষক যেন সহজে ভর্তুকি পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

পিকেএসএফ কৃষকদের উন্নয়নে জন্য কী কাজ করছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শুধুু ধান চাষ নয়, কৃষকদের বিভিন্ন আয়বর্ধক ফষল উৎপাদনে উৎসাহিত করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সরবরাহ, অর্থায়ন, বাজার তথ্য সরবরাহসহ ভালো মানের বীজ দেয়া হয়।

পিকেএসএফের সহোযোগী সংস্থার মাধ্যমে কৃষকের সঙ্গে পরামর্শ করে অধুনিক পদ্ধতিতে ফষল চষের পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়। জৈব সার ব্যবহারে কিভাবে করতে হবে সেটা দেখিয়ে দেয়া হয়। আমরা কৃষকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ দিয়ে থাকি, কিভাবে ঋণের টাকা ফেরত দিবে সেটা কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হয়। আমরা এখন যার যার প্রয়োজন অনুয়ায়ি সর্বচ্চ দশ লাখ টাকা লোন দিয়ে থাকি। আমরা কৃষকের বাজারজাতকরণেও সহায়তা করে থাকি। কিভাবে ফষল সংরক্ষণ করবে এর প্রতিক্ষণ দেয়া হয়। সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। একই সময়ে একই জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করাই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে শুধু যে ফসল চাষ হয় তা নয়। ফসলের সাথে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি মাছও চাষ করার পদ্ধতি শেখানো হয়।
এক যায়গায় পানি সমস্যা ছিল। পানির জন্য কৃষক ফসল উৎপাদন করতে পারতো না। আমরা সেখানে পানির পাম্প বসিয়ে দিয়েছি। ১০০ কৃষক সেখানে এখন ফসল ফলাতে পারছে।

তামাক সহ ক্ষতিকর ফষল উৎপাদনে কৃষককে নিরুৎসহিত করা হয়। কারণ তামাক চাষে পরিবশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি রয়েছে। মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।

ঢাকাটাইমস/১০জুন/ইএস