হ্যাম রেডিও দিয়ে যেভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ছবি পেলাম

এ.বি.এম. তানভীর হাসান S21VU
| আপডেট : ১১ জুন ২০১৯, ১২:৩৫ | প্রকাশিত : ১১ জুন ২০১৯, ১১:৩৩

৬ জুন রাত। ঈদের আমেজ তখনো কাটেনি। ঈদের চাঁদ দুইদিন আগেও উঠলেও বাংলাদেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটর বা হ্যামরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা, ৬ জুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন) বা আইএসএস-এর ‘এক্সপেডিশন ৫৯-এমএআই-৭৫ জুন ২০১৯’ চলছিল। ওই দিন আইএসএস মহাকাশ থেকে সারা পৃথিবী জুড়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর ছবি ডাটা আকারে ট্রান্সমিট করে যাচ্ছিল। সারা পৃথিবী জুড়ে অনেকে অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা ঐ ছবি বা ডাটা গ্রহণে ব্যস্ত ছিল। অন্যান্য অ্যামেচারদের মতো আমারও প্রচেষ্টা ছিল রেডিও দিয়ে আইএসএস এর ছবি গ্রহণ করার।

৬ জুন সন্ধ্যার পর আইএসএস ঠিক বাংলাদেশের উপর দিয়ে অতিক্রম করে। তাই দেশের সকল এস২১ হ্যামরা কেউ বাসার ছাদে, কেউবা খোলা মাঠে বা আঙিনায়, খোলা বারান্দায় রেডিও হাতে নিয়ে অ্যান্টেনা আকাশের দিকে তাক করে অধীর অপেক্ষায় ছিল। আমিও তাদেরই একজন ছিলাম।

রাত আটটা ৪০ মিনিটের দিকে আইএসএস থেকে হালকা সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল। আইএসএস-এর এবারের পাসের এলিভেশন অ্যাঙ্গেল বেশি থাকায় আটটা ৪৩ মিনিটে ভালো সিগন্যাল আসতে থাকে। প্রায় দুই মিনিটের মতো সময় ধরে ভালো ট্রান্সমিশন সিগন্যাল পাওয়া যায়। যেটা আমি রেকর্ড করে রাখি। বলে রাখা ভালো, আইএসএস-এর পাঠানো ইমেজ ডাটা এনকোড আকারে পৃথিবীতে আসে। যেটা সফটওয়্যার বা অ্যাপের মাধ্যমে ডিকোড করতে হয়।

সিগন্যাল রিসিভ করার পর অ্যামেচাররা বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা খোলা মাঠ থেকে চলে যায় নিজ নিজ স্টেশনে। রেডিও দিয়ে গ্রহণ করা ডাটা বা অডিও রিডাইরেক্ট এবং ডিকোড করার জন্য। অডিও রিডাইরেক্ট করা মানে হচ্ছে আইএসএস থেকে গ্রহণ করা অডিও ফাইলটা কম্পিউটার বা অ্যাপে অন করে ডিকোডিং করা।

দুইভাবে কাজটা করা যায়। প্রথমটা হচ্ছে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সফটওয়্যার দিয়ে ডিকোডিং। আরেকটা উপায় হলো স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে কাজটা করা। এটা অনেকটাই সহজ উপায়। সময়ও কম লাগে।

[আইএসএস-এর পাঠানো সিগন্যাল কম্পিউটারে ডিকোডিংয়ের কাজ চলছে]

আমি কম্পিউটারের মাধ্যমে আইএসএস থেকে প্রাপ্ত সিগন্যাল ডিকোডিং করেছিলাম। এজন্য আমি আমি ব্যবহার করছিলাম ‘ RX-SSTV.exe’ সফটওয়্যার। এটা ডেভেলপ করেছে বিদেশি হ্যাম ON6MU। অনেকেই ডিকোডিং করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন। সাধারণত এসএসটিভি ট্রান্সমিট হয় রোবট ‘Robot36’-এ কিন্তু আইএসএস এসএসটিভি ট্রান্সমিট করছিল PD120 মোডে। সৌভাগ্যবশত ‘RX-SSTV.exe’-এ এই অটো মোড থাকায় আমি খুব সহজে সফটওয়্যার দিয়ে ইমেজ ডিকোড করেছিলাম।

আমার মতো ওইদিন যারা আইএসএস-এর ডাটা সিগন্যাল রিসিভ করেছিল তারা ডিকোড করতে ঝামেলায় পড়েন। তারা মনে করেছিল ডাটা ঠিকমতো রিসিভ হয়নি। তাই ডিকোড হচ্ছে না। শেষে আমি তাদের উপায় বাতলে দিলাম। বললাম, ‘PD120’ ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই প্রাপ্ত অডিও সিগন্যালটি অ্যামপ্লিফাই করার জন্য LNA (Low Noise Amplifier) ব্যবহার করেছিল। ফলে তাদের সিগন্যাল রিপোর্ট অন্যদের তুলনায় ভালো ছিল।

যাই হোক, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষে আমি ডাটা ডিকোড করে পাই কাক্ষিত ইমেজ বা ছবি।

[আইএসএস-এর পাঠানো সিগন্যাল ডিকোড করার পর এই ইমেজটা পেয়েছিলাম]

জানিয়ে রাখা ভালো, হ্যামরা কেবলমাত্র আইএসএস থেকে এএসটিভি ট্রান্সমিশন রিসিভ করে এমনটা নয়। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের হ্যামরাও এসএসটিভি প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি আদান-প্রদান করে। অতি সম্প্রতি আমি বাংলাদেশের হ্যাম S21LE-এর সঙ্গে এসএসটিভি প্রযুক্তিতে হ্যাম রেডিওর মাধ্যমে ছবি আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি।

বড় ধরণের দুর্যোগের ক্ষেত্রে এসএসটিভির মাধ্যমে দুর্যোগের স্থির চিত্র প্রেরণ ও গ্রহণ করা সম্ভব। ৭৩

আইএসএস থেকে পাঠানো সিগন্যাল পৃথিবীতে এভাবেই আসে। শুনুন অডিও:

(ঢাকাটাইমস/৬জুন/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা