ঐক্যফ্রন্টে অনৈক্য চাই না: কাদের

প্রকাশ | ১১ জুন ২০১৯, ১৪:১৭ | আপডেট: ১১ জুন ২০১৯, ১৫:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ থাকুক এটাই প্রত্যাশা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ হোক। তাদের মধ্যে সমন্বয় হোক। এটাই আমরা চাই। বাংলাদেশে একটা শক্তিশালী দায়িত্বশীল বিরোধীদল গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য শুভ।

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন কাদের।

গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর শরিক দলগুলোর মধ্যে আছে বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

নির্বাচনে বিএনপির সাতজন এবং গণফোরাম থেকে দুইজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতরা শপথ নেবেন না অটল থাকলেও শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ছাড়া সবাই শপথ নেন।

বিষয়টি নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ঘোচাতে গতকাল বৈঠকে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। ঐক্যফ্রন্টের ‘স্টিয়ারিং কমিটি’র বৈঠকে কাদের সিদ্দিকীসহ অনেকে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি ঐক্যফ্রন্ট।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পাচ্ছে, বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে।

জবাবে কাদের বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে আপনারা যে প্রশ্ন করেছেন, ঐক্যফ্রন্টে সমন্বয় নেই, ঐক্য নেই। আমরা সেটা চাই না। ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ হোক, তাদের মধ্যে সমন্বয় হোক, বাংলাদেশে একটা শক্তিশালী দায়িত্বশীল  বিরোধীদল গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য শুভ।’

‘শক্তিশালী দায়িত্বশীল বিরোধীদল আমরা চাই। সংসদের ভেতরে এবং বাইরে শুধু দায়িত্বশীল নয়, শক্তিশালী বিরোধীদল আমরা চাই। বিরোধীদল যথাযথ ভূমিকা পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনা সরকারের প্রত্যাশা, সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্বেগে আওয়ামী লীগ কোনো চাপ অনুভব করছে না বলে জানান কাদের।

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির উদ্বেগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তার (খালেদা) স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিন্তু ডাক্তাররা তো কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করছে না। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য উদ্বেগের পর্যায়ে আছে এটা আমাদের জানা নেই। মেডিকেল বোর্ডও এরকম কোনো তথ্য দিতে পারেনি।’

‘খালেদা জিয়ার পক্ষে কিছু করতে না পারায় বিএনপি নেতারা মুখ রক্ষার জন্য, কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য নানান কথা বলছে। বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাজনীতি করতেই তারা বেশি অভ্যস্ত এবং ব্যস্ত।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বারবার বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। বিদেশিরা কখনও বলেনি বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য খারাপ। তারা বলেছে, বন্দি অবস্থায় যেন ভালো চিকিৎসা হয়। ভালো চিকিৎসা তো হচ্ছে। ডাক্তারদের পক্ষ থেকে তো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি’।

আওয়ামী লীগের নেতারা প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিচ্ছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ করছে সে বিষয়ে কাদের বলেন, ‘যারে দেখতে নারী, তার চলন বাঁকা। শেখ হাসিনার ভালো কাজ তারা দেখতে পায় না। উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না। কারণ হচ্ছে তারা ধরে নিয়েছে তাদের রাজনীতি হচ্ছে বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা। বাস্তব অবস্থার কোনো বিচার বিশ্লেষণ তারা করছে না। আসলে তাদের পাওয়ারের চশমা দরকার। উন্নয়ন দেখার জন্য তাদের এখন পাওয়ারের চশমা দরকার। পাওয়ারের চশমা হলে হয়তোবা দেখতে পাবেন’।

বিএনপির নারী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই রুমিন ফারহানার সংসদকে অবৈধ বলাকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তার সাহসের আমরা প্রশংসা করি যে, তিনি সংসদে এসেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম তো পাস করেও সংসদে আসেননি। সংসদে এসে সংসদের বিরুদ্ধে বলুক, সরকারের বিরুদ্ধে বলুক এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারপর  সংসদে তো এসেছেন। সংসদ সদস্য হয়ে কিভাবে এই সংসদকে অবৈধ বললেন, এর মীমাংসা সংসদ অধিবেশনে হবে।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকন প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/১১জুন/এমআর