‘বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে’ আবার অপেক্ষা করছে বিদ্রোহ

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৯, ২১:২৩

আনোয়ারুল হক রয়েল

যিনি সভাপতি সম্পাদক হয়ে দীর্ঘদিন দায়িত্বশীল থাকেন তিনিও ছাত্রদল ছাড়তে চান না। জানিনা কি এই যাদুবিশ্বাসের মত জড়িয়ে রাখে! এই মুহুর্তে যদি আমান ভাই, রিজভী ভাই,বাবু ভাইকে বলা হয় ছাত্রদলের দায়িত্ব নিতে।কিছুক্ষণ ভাব্বেন। যিনি এ সংগঠনের স্রষ্টা (শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান) ছিলেন তিনিই জানতেন এ রহস্য।

তবে তিনি মেধাবী সৎ সাহসী দেশপ্রেম সচেতন যোগ্যদের নিয়েই এর যাত্রা শুরু করেছিলেন। শিক্ষা ঐক্য সততা প্রগতি আর নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ছাত্রদল" ছিল এর মূলমন্ত্র। সে মূলমন্ত্র থেকেই সরে গিয়েছে ছাত্রদল! এটা একদিনে হয়নি। যদিও এর কাচামালে সমস্যা হয়েছে,ব্রান্ড ঠিকই আছে এবং থাকবে। অনেক পজেটিভ দিকও আছে।

এবারের গন্ডগোলটা পাকিয়েছে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল। সিম্পল বিষয়টি পেচিয়ে এই অবস্থায় এনেছে। ছাত্রদলের কমিটি গঠন নির্বাচন কমিশনের মত জাতীয় দায়িত্বের কার্যকলাপ যেমন লক্ষ্য করা গেছে। যার প্রয়োজন ছিলনা,থাকলেও সেটা অতি গোপনীয়, সেগুলো প্রকাশ হয়ে যাওয়া মোটেও ঠিক হয়নি।

সর্বশেষ যা হয়েছে দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি তাহলোই। বয়স ২০০০ এসএসসি, মানে হচ্ছে ১৫+২০= ৩৫ আবার আগামী ৩/৪ বছর কমিটি চলাকালীন বয়স ৪০ এর কাছেই দাঁড়াবে। বর্তমান সমালোচনা এবং যৌক্তিকতার প্রেক্ষাপটে বয়স শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদে ২৩-২৫ এবং কেন্দ্রীয়, জেলা,বিভাগীয় ২৮-৩০ হওয়াই সমুচিত। জরুরি প্রয়োজনে ভিন্ন।

ব্যাক্তি বিশেষের ৩৫/৩৬ বছরের কোন ছাত্রনেতা থাকতেই পারে যাকে অধিষ্ঠিত করার জন্যে এই ক্রাইটেরিয়া। অথবা স্বার্থান্বেষী মহলের মনোনীত কেউ বর্তমান ৩৫ বছরের উর্ধ্বে তরুণদের মধ্যে নেই, মানে তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে না বিধায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া কয়েক দফা পিছিয়েছে।

সংগঠন যাকে দিয়ে চলবে তাকেই দায়িত্ব দেয়া উচিত, অন্যথায় ছাত্রজীবন যাদের আছে সেরকম ছাত্রদের দিয়েই নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। ৩৫ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিগত কমিটিতে যে অবস্থা ছিল ৩৫ বছরে একই অবস্থা দাঁড়াবে।

ছাত্রদলের উদ্দেশ্য যদি হয় কোমলপ্রাণ ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করে দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করা। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষা-প্রয়োজনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধূলা, বিতর্ক এবং রাষ্ট্রীয় ভারসাম্যহীনতায় এর পরিসর বাড়তে পারে। বিষয়টি খুব সিম্পল, এ নিয়ে এতো হাকডাকের কি আছে? সমস্যা যত পারসনাল প্রিকনডিসনাল বিহেভিয়ারে।

যাক গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে ছাত্রদলে গণতন্ত্র চালু হউক সেটা প্রত্যাশিত। শুধু ছাত্রদলে কেন সকল ক্ষেত্রে অভ্যাসটা চালু হউক। সেটা দেখেও হয়তো রাষ্ট্রের গণতন্ত্র ফিরে আসতে পারে।

অনেক ভাল সাহসী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে সেগুলি ঢাকা পড়ে যায় বিতর্কিত কিছু। যেহেতু সময় থেমে থাকে না, সংগঠনের পদও ধরে রাখা যায় না,কত বেশি দিতে পারেন সংগঠনকে সে মনোভাব নিয়েই সংগঠন করা উচিত। সংগঠনকে ভালোবাসুন, লালন করুন কিন্তু এর প্রতি মোহগ্রস্ত হবেন না। আরো বড় জীবন আপনার সামনে।

বিদ্রোহের আভাস

প্রতিবার কমিটি গঠন সুপার ফাইভ বা আংশিক গঠন করা হয়। বছর দুই পরে বাকী কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। বলা হয়ে থাকে নির্দিষ্ট অল্প সময়ের মধ্যেই। কিন্তু একপ্রকার দীর্ঘকাল মুলা ঝুলিয়ে রাখার মত! পরবর্তীতে লম্বা গণতালিকা প্রকাশিত হয় যা নেতৃত্বে আস্থার সংকট তৈরি করে। কাজের কাজ কিছুই হয় না।কমিটিতে ঠিকে থাকার লড়াই আবার ভাঙ্গা বা ব্যর্থ বানানোর মানসিকতায় লেগে পড়ে। কারবারি রাজনীতি ই চলে।ইউনিটগুলো মনোনয়ন কেন্দ্রিক লিজে পরিনত হয়। জোর করে কিছু ইউনিট কমিটি গঠন করা হয় সেগুলি আর  অনুমোদনের মুখ দেখে না।

আর একশ্রেণীর নেতা দপ্তরের কম্পিউটারের সাথে তদবিরে ব্যস্ত হয়ে যায়। কারণ তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেয়, প্রয়োজনে একজনকে বাদ দিয়ে হলেও আরেক জনের নাম দপ্তরে অপারেটর করিয়ে দিতে পারে এ বিতর্ক আছে। সুতরাং দপ্তর পুনবিন্যাস করলে কি ক্ষতি যেহেতু বিতর্কিত।

যে সকল মেধাবী যোগ্য সিনিয়র তরুণরা ছাত্রদল প্রেমিকরা ছাত্রদল ছেড়ে অন্যদলে (যুবদল,স্বেচ্ছাসেবকদল)এসে নেতৃত্ব দেবে তাদের জায়গা করে দেবার দায়িত্ব সংগঠনের। সেখানেও কি অবস্থায় আছে?

যারা অঙ্গ দুইদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যথেষ্ট যোগ্য পরিক্ষিত ত্যাগী নিঃসন্দেহে। বিদ্রোহকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে যথেষ্ট সক্ষম এবং দক্ষ। বিএনপিকে সংগঠিত করার যথেষ্ট যোগ্যতা উনাদের আছে। আশা করি আগামীর সকল নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

সংগঠন শক্তিশালী করাই জরুরি। আর সংগঠন শক্তিশালী হলেই হবে সঠিক রাজনীতি সহজেই নেত্রীর মুক্তির পথ আলোকিত হবে। এ দেশের মানুষই তারেক রহমান আগামীর রাষ্ট্র নায়ক উপহার দেবে। গালভরা বুলিতে হবে না।

আপাতত এখানে থামতে চাই যে প্রসঙ্গ টেনে তা হলো বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদটি বিলুপ্ত করা হল কি কারণে জানি না।আগে একজনই সমস্যার সমাধান করতেন এখন কয়েক ডজন বিজ্ঞজন।পারবেন ইনশাআল্লাহ। দল নেতাকর্মীদের রক্ষা করে নেতাকর্মীরা দল রক্ষা করে।

লেখক:ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা