পুঁজিবাজারে স্টক ডিভিডেন্ড দিলে বাড়তি কর

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৯, ১৭:৩৪ | আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯, ১৮:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

পুঁজিবাজাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে লভ্যাংশ হিসেবে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। কোনো কোম্পানি বোনাস শেয়ার বা স্টক ডিভিডেন্ড দিল ১৫ শতাংশ বাড়তে কর দিতে হবে।

আবার তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হবে। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী দ্বৈতকর প্রত্যাহার করা হবে। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজারকে দেখতে চায় সরকার।

বৃহস্পতিবার সংসদে দেওয়া বাজেট বক্তব্যে পুঁজিবাজারের জন্য নানা প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বক্তব্য শুরু করলেও অসুস্থতার জন্য তিনি কথা শেষ করতে পারেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষ করেন।

প্রধানমন্ত্রী দুই জায়গায় আলাদাভাবে পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের চিন্তা তুলে ধরেন। এক জায়গায় তিনি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহী করার কথা এবং আরেক জায়গায় সুশাসনসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেন।

লভ্যাংশ হিসেবে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে জোর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীগণ কোম্পানি থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশা করেন। সেই বিবেচনায় ক্যাশ ডিভিডেন্ট প্রদান পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্যাশ ডিভিডেন্ড এর পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড তথা বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীগণ তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

কোনো কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড দিতে চাইলে এই ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করার কথা বলা হয় বাজের বক্তব্যে। এতদিন ক্যাশ ডিভিডেন্ডের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর থাকলেও স্টড ডিভিডেন্ড করমুক্ত ছিল।

স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে লভ্যাংশ রেখে দেওয়ার প্রবণতা রুখতে কঠোর হওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোনো কোম্পানি কোনো আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে, তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করছি।’

ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের হাতে পাবলিকলি ট্রেডেট কোম্পানি হতে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় নির্ধারণেরও প্রস্তাব করা হয় বাজেটে।

নিবাসী কোম্পানির ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর একাধিক করারোপণ রোধ করার বিধান গত বছর কার্যকর করা হয়েছিল। আগামী অর্থ বছরে নিবাসী ও অনিবাসী সব কোম্পানির ওপর এই বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ কোম্পানির ডিভিডেন্ড আয়ের ওপরও একাধিকবার করারোপণ হবে না।

শক্তিশালী পুঁজিবাজারের স্বপ্ন

সরকার একটি বিকশিত পুঁজিবাজার চায় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, শিল্প বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মাধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। তবে বাংলাদেশে ব্যাংক খাত হতে স্বল্পমেয়াদী আমানতের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। এতে ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়। আর তাতে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতারা।

‘আমরা পুঁজিবাজার হতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সংগ্রহে ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহ প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে এই বাজার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে আসতেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। বলেন, ‘পুঁজিবাজারের পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি জোরদার করা হবে।’

এই বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা থাকছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত থাকবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার হতে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ওপর দ্বৈতকর পরিহার করা হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’

পুঁজিবাজারে রুগ্ন কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথাও জানানো হয় বাজেটে। বলা হয়, ‘যদি কোনো আর্থিক দিক থেকে সবল কোম্পানি আত্মীকরণ করতে চায় সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দর কষাকষির মাধ্যমে কিছুটা বিনিয়োগ সুবিধা দিয়ে হলেও এ কাজটা করা গেলে পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আসবে বলে আমরা মনে করি। এই প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং স্থিতিশীলও থাকবে।’