পোস্টকার্ডে লড়াই

অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০১৯, ০৮:৪৫

বিলুপ্ত হয়েছে অথবা বিলুপ্তির পথে এমন কিছু যদি হঠাৎ সাড়ম্বরে হাজির হয়, আর তা বিপুল আলোচনার মুখ্য বিষয় হয় তাহলে খটকা লাগাই স্বাভাবিক। আর তা যদি রাজনৈতিক দলিল-দস্তাবেজ না হয়েও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার হাতিয়ার হয়, তাহলে? বিলুপ্তপ্রায় এমনি একটি বস্তু পোস্টকার্ড নিয়ে ইদানীংকালে হুলুস্থুল হয়ে গেলে ভারতে। এই পোস্টকার্ডকে বিজেপি যদি কামান বানাল, তো তৃণমূল একে বানাল মিসাইল।

আঠারো শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পোস্ট অফিস ও পোস্টকার্ডের প্রচলন হয় বলে ইতিহাসের ভাষ্য। সেই থেকে সত্তর দশকের শেষ পর্যন্ত হলদেটে রঙের পোস্টকার্ডই ছিল সর্বসাধারণের যোগাযোগের একমাত্র বাহন। ঈদের শুভেচ্ছা হোক কিংবা বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো- সবকিছুর অন্যতম বাহন ছিল এই পোস্টকার্ড। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইনভেলপও।

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা বিলুপ্তির পথে। তেমনিভাবে মোবাইল ফোন, ফেসবুক, এসএমএস, হোয়াটসআপ ও ই-মেইল প্রযুক্তির আগ্রাসনে পোস্টকার্ড এখন অবহেলিত মাধ্যম।

বিলুপ্তপ্রায় এই পোস্টকার্ডই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এখন সবচেয়ে আলেঅচিত নাম। একপক্ষ কমপক্ষে ১০ লাখ পোস্টকার্ড পাঠাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে, অপরপক্ষ কমপক্ষ ৩০ লাখ পোস্টকার্ড পাঠাবে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে- এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির পক্ষ থেকে।

গত ৩১ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত কলকাতায় অবস্থানকালে সে দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ওই রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিলুপ্তপ্রায় এই পোস্টকার্ড লড়াই নিয়ে রীতিমতো আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা গেছে।

রাজ্যটির প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এই পোস্টকার্ড লড়াইয়ের সূত্রপাত গত ৩০ মে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যানার্জির নৈহাটি নামক স্থানে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে বিজেপির নেতাকর্মীদের দেয়া ‘জয় শ্রীরাম, স্লোগানকে কেন্দ্র করে।

কলকতা থেকে প্রকাশিত ‘এই সময়’ পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত যেতে তিন জায়গায় বিজেপি নেতাকর্মীরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন। একই খবরে উল্লেখ করা হয়, এতে মুখ্যমন্ত্রী রাগান্বিত হয়ে তিন স্থানেই গাড়ি থেকে নেমে তাদের প্রতি তেড়ে যান। পরে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে তিনি পাল্টা স্লোগান দেন- ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’।

মুখ্যমন্ত্রীর এই স্লোগানের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারাকপুর আসন থেকে নির্বাচিত বিজেপির লোকসভার নবনির্বাচিত সদস্য সাংসদ অর্জুন সিং একাই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ১০ লাখ ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা পোস্টকার্ড পাঠাবেন বলে ঘোষণা দেন। ওই সাংসদের এমনতর ঘোষণায় অন্যান্য বিজেপি নেতাকর্মীরাও ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা পোস্টকার্ড মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠাবেন।

পরের দিন একই পত্রিকাসহ অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরে এর পাল্টা হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রী তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘোষণা দেন তিনি একাই ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’ লেখা ৩০ লাখ পোস্টকার্ড দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তরে পাঠাবেন। তিনি তার দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’ পোস্টকার্ড পাঠাতে অনুরোধ করেন।

এভাবেই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে আবিষ্কৃত মোবাইল ফোন, ফেসবুক, এসএমএস, হোয়াটসআপ ও ই-মেইলের কল্যাণে বিলুপ্তির পথযাত্রী হলদেটে রঙের পোস্টকার্ড নামের বস্তুটি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইদানীং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এই পোস্টাকার্ড লড়াইয়ে রাজ্যের ডাক বিভাগ পড়েছে বিপাকে। ওই বিভাগের এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, প্রতিটি পোস্টকার্ড তৈরির খরচ পড়ে ১২ টাকা, যা বিক্রি করতে হয় ৫০ পয়সায়। তাছাড়া এত বিপুলসংখ্যক পোস্টকার্ড বিলি করতে তাদের বাড়তি লোক নিয়োগ করতে। প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এই পোস্টকার্ড লড়াই যে সহজে থামবে না, নতুন নতুন রূপে সামনে আসবে তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা আর খুনখারাবির খবর পাওয়া গেছে গত কয়েক দিনে।

লেখক: সাংবাদিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :