‘বাজেট প্রণোদনায়’ খুশি নয় পুঁজিবাজার

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ২০:৩৭ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯, ২৩:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে যেসব ‘প্রণোদনা’ ঘোষণা করা হয়েছে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি লেনদেনে। বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমার পাশাপাশি মূল্য সূচক পড়েছে প্রায় এক শতাংশ। লেনদেনও কমেছে আগের দিনের চেয়ে।

বাজেট প্রস্তাবের পর গতকাল প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৪৩ পয়েন্ট। কমেছে সিংহভাগ শেয়ারের দর। লেনদেনও কমেছে আগের দিনের চেয়ে।

তবে প্রথম দিনের লেনদেন দেখেই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চান না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক পরিচালক রকিবুর রহমান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করতে হবে। আগে দেখতে হবে বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয় কি না। বাজেট প্রস্তাবগুলোর সঠিক প্রয়োগ এবং সুশাসন দৃশ্যমান হলেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।’

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এতে পুঁজিবাজারের প্রসঙ্গটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। সরকার ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার আর পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিয়ে যে কাজ করবে, এটি প্রথমে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার দেখতে চান।

গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর এক মাস পুঁজিবাজার ছিল চাঙ্গা। কিন্তু জানুয়ারির শেষ দিন থেকে শুরু হয় দর সংশোধন। লেনদেনেও নেমে আসতে থাকে খরা। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার জানিয়েছেন, বাজেটে তিনি পুঁজিবাজারের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা রাখবেন এবং বাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজারে কারসাজি বন্ধ করতে।

এর মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বিশেষভাবে বোনাস শেয়ারের বদলে নগদে লভ্যাংশ দিতে উৎসাহী করতে দুটি বিধান যোগ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে একটি হলো বোনাস লভ্যাংশ দিলে সেই লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। আবার কোনো কোম্পানির রিটেইন আর্নিং এবং রিজার্ভ তার পেইড আপ ক্যাপিটালের ৫০ শতাংশের বেশি হলে তার ওপর তার ওপরও ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

কোম্পানির লভ্যাংশে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত রাখা, মুনাফার ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রুগ্ন কোম্পানগুলোকে অধিগ্রহণের জন্য নীতিমালা করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবের পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা নিজেদের সন্তোষ প্রকাশ করে আশা করেছিলেন, এসব উদ্যোগে চাঙ্গা হবে বাজার। তাই রবিবার প্রথম কার্যদিবসে বাজার কী আচরণ করে, সেটা নিয়ে দৃষ্টি ছিল।

সকাল সাড়ে ১০ টায় লেনদেন শুরুর প্রথম তিন মিনিটে বাজার হয় ঊর্ধমুখী। পাঁচ হাজার ৪৭৪ পয়েন্ট নিয়ে লেনদেন শুরু করা মূল্য সূচক ১০টা ৩৩ মিনিটে পাঁচ হাজার ৫০৪ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এরপর সংশোধন হতে থাকে দাম। শেষ পর্যন্ত বেলা আড়াইটায় আগের চেয়ে সূচক ৪৩ পয়েন্ট।

শেষ পর্যন্ত লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৮টির, কমেছে ২০১টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ৫০টির দর। লেনদেন হয় ৫৩৪ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৫৭২ কোটি টাকা।

এই দর পতনে অন্যতম ভূমিকা ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের দাম কমা। তালিকাভুক্ত ৩০ টি ব্যাংকের মধ্যে দুটির লেনদেন আজ বন্ধ লভ্যাংশের রেকর্ড ডেটের কারণে। বাকিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে কেবল ব্যাংক এশিয়া, ডাচ বাংলা, রূপালী এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের। দর বদলায়নি এবি, আইসিবি ইসলামী, প্রাইম, এবং ইউসিবি ব্যাংকের। বাকি ২০টি ব্যাংকের শেয়ার দরই কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার বিষয়ে প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে বিপাকে পড়তে হবে তাদের রিজার্ভ নিয়ে। কারণ, পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিজার্ভ হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংকে পরিশোধিত মূলধনের চারগুণ, সাড়ে তিন গুণ রিজার্ভও আছে। ইসলামী ব্যাংকে ‘অতিরিক্ত’ রিজার্ভ আছে দুই হাজার ১০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ জন্য ব্যাংকটিকে ২৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বেশি কর দিতে হবে। এভাবে কোনো কোনো ব্যাংককে বছরে যে পরিমাণ মুনাফা করে, তার সমপরিমাণ বা কাছাকাছি বাড়তি কর দিতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর মুনাফা বিতরণের ক্ষমতা উল্টো কমে যেতে পারে।

ঢাকাটাইমস/১৬জুন/জেআর/ডব্লিউবি