আমারও যদি থাকত একটি ঘর ব্রাসেলসে

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০৮:২২ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯, ১১:২৮

দেলোয়ার হোসেন, ব্রাসেলস, বেলজিয়াম থেকে

ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্র বলা হয় বেলজিয়ামকে। বলা হয় বললে ভুল হবে। বলা হতো। বেলজিয়াম কেন, গোটা ইউরোপ থেকেই তো যুদ্ধ নামক দানব পলিয়েছে বহু আগে। যেটা এখন এশিয়া আফ্রিকার ঐতিহ্যতে পরিণত হয়েছে। আর বেলজিয়াম তো এখন শান্ত, নীরব এবং ইউরোপে শান্তির কেন্দ্রভূমি।

বার্লিন থেকে রায়ান এয়ারলাইন্সে ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে নামলাম সকাল সাড়ে সাতটায়। সেনজেন ভিসা। কোনো ঝামেলা নেই। এক দেশ থেকে অন্য দেশ যেতে ইমিগ্রেশন লাগে না। গোটা ইউরোপ যেন একটা দেশ। কি চমৎকার বোঝাপড়া মিলতাল ইউরোপের মধ্যে। যেন এক সূত্রে গাঁথা, ভাই ভাই।

ব্রাসেলস এয়ারপার্টে বেশ বড়। দৃষ্টিনন্দন। এয়ারপোর্টের নানা জায়গায় লেখা- স্বাগতম, ব্রাসেলস, হার্ট অব ইউরোপ। আসলেই তো বেলজিয়ামের রাজধানী হার্ট অব ইউরোপ। বেলজিয়ামের অবস্থান অনেকটা ইউরোপের মাঝখানে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দপ্তর অবস্থিত ব্রাসেলসে। দুই সদর দপ্তর পাশাপাশি অবস্থিত। প্রায় ১২ হাজার কর্মচারী কর্মকর্তা কাজ করেন এই সদর দপ্তরে।

এয়ারপোর্ট থেকে আমার গন্তব্য ১০ কিলোমিটারের দূরত্ব। ইউরোপের আওয়ামী লীগ নেতা ও এক সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা আব্দুস সালাম তার মার্সিডিজ বেঞ্জ নিয়ে রওনা করেছেন। আমাকে বললেন ১০ মিনিট ব্রাসেলস এয়ারপোর্টের ড্র ফপে অপেক্ষা করতে।

বিনয়ী সালাম ভাই। প্রায় ৩০ বছর আগে ইউরোপে এসেছেন। বেলজিয়ামে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত। ব্রাসেলস শহরে নিজের বাড়ি। বেশ কয়েকটা দোকানপাট এবং আছে অন্যান্য ব্যবসা। অনেক ব্যস্ত মানুষ। তারপরেও তিনি আমাকে নিতে এসেছেন। তিনি আমাকে চেনেন না। আমিও তাকে চিনি না। তাকে তো আমি বিরক্ত করছি। ভেবে বিব্রত হচ্ছিলাম। কিন্তু না।  এই সভ্য ইউরোপের তিনিও একজন বিনয়ী, সভ্য মানুষ। তার ও তার পরিবারের আতিথিয়তায় আমি কেবল মুগ্ধ হলাম।

ইউরোপের প্রতিটা দেশই অসাধারণ সুন্দর। কোনোটার চেয়ে কোনোটা কম নয়। দুই দিন আগে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম পোলান্ডের রাজধানী ওয়ালশ দেখে। আগের দিন প্রেমে পড়েছিলাম ছবির চেয়েও সুন্দর বার্লিনের রুপে। আজ আরেকবার মুদ্ধ করল ব্রাসেলস। কি শান্তশিষ্ট নীরব চকচকে নগরী! মাঝেমধ্যে দেখলাম হৃষ্টপুষ্ট ঘোড়ায় চড়ে টহল দিচ্ছেন সুনয়না সুন্দরী মহিলা পুলিশ। ঘোড়ায় চড়ে কেন? এটা নাকি বেলজিয়ামের ঐতিহ্য।

বেলজিয়াম শান্তির দেশ। এক সময় এখানে ইমিগ্র্যান্ট অনেক সহজ ছিল। তখন ঝাঁকে ঝাঁকে এখানে লোক এসেছে সারা দুনিয়া থেকে। ব্রাসেলসে তাই সারা দুনিয়ার মানুষ দেখবেন। সালাম ভাই বললেন, ১৫০ দেশের মানুষ দেখতে পাওয়া যায় এখানে। বেলজিয়ামের বেতন কাঠামো অনেক ভালো। ইউরোপের অনেক দেশের নাগরিকও এখানে কাজ করতে আসেন বেশি বেতনের কারণে।

শত বর্ণ ও ধর্মের মানুষের রাজধানী ব্রাসেলস। ইউরোপের কেন্দ্র ব্রাসেলস। হাজার দশেক বাংলাদেশিরও বসবাস এখানে। শান্তি ও সমৃদ্ধ নগরীতে তাদের দিন কাটছে সুখে। আমারও যদি থাকত একটি ঘর এই ব্রাসেলসে!

ঢাকাটাইমস/১৭জুন/ডিএইচ