বর্ষায় ভালো নেই হাওরপারের মানুষেরা

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০৯:১১

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, ঢাকাটাইমস

শুষ্ক মৌসুমে একফসলি বোরো ধান চাষাবাদে মহাব্যস্ত সময় পার করলেও বর্ষায় কোনো কাজ থাকে না হাওরবাসীর। এতে অনেক অভাব-অনটনে সময় কাটাতে হয় হাওরপারের মানুষদের। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাজুড়ে তাদের কণ্ঠে শোনা যায় শুধুই হাহাকার। এবার ধানের দাম না পাওয়ায় সেই হাহাকার আরও বেড়েছে।

হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দ্বীপসদৃশ্য গ্রামের জনসাধারণ বর্ষায় ছয় মাস বেকার থাকে। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই পানি থৈ থৈ করছে। ফলে কোনো কাজের ব্যবস্থা নেই। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে সরকারের সুনজর কামনা করেছে হাওরবাসী।

জানা যায়, বর্ষায় জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুরসহ হাওরপারের ৮০ ভাগে মানুষই থাকে পানিবন্দি। এসময়ে কোনো কাজ না থাকায় সাধারণত বেকার থাকে তারা। আর গ্রামগুলোর সাথে সড়কপথের যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় স্কুল, কলেজ ও সরকারি অফিস আদালতে যেতে হাওরবাসীকে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।

শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে মহাব্যস্ত সময় পার করলেও বর্ষায় তাদের কোনো কাজ থাকে না। এসময় তারা কেরাম, ঘাফলাসহ বিভিন্ন খেলা, চায়ের দোকানে বসে আড্ডা আর সিডিতে ছবি দেখে কিংবা তাস খেলে সময় পার করে। বিকালের পর থেকেই ভাসমান দ্বীপসদৃশ্য গ্রামগুলোর ছোট ছোট বাজারে ও আশপাশে খোলা জায়গায় বসে জমজমাট আড্ডা। গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে বাংলা সিনেমা, ভারতীয় সিনেমা দেখার হিড়িক পড়ে যায়।

হাওরপারের বাসীন্দা শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে হাওরপারের মানুষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারত। কিন্তু সরকারের সুনজর না থাকায় এই মানবসম্পদ এখন সমাজের বোঝা হচ্ছে দিন দিন। হাওরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, মিল-কলখারকানা থাকলে হাজার হাজার মানুষ বেকার থাকত না। বর্ষায় কিছু লোকজন আছে তারা ডিঙ্গি নৌকা, বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা তৈরি করে দূর-দূরান্তে যাত্রী পরিবহন করে। কেউ কেউ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে ফেরি পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই কোনো কাজ থাকে না।

হাওরপারের কৃষক সাদ্দাম হোসেন, সাদেক, মিজানসহ অনেকেই ঢাকা টাইমসকে জানান, কৃষি কাজ করে এখন তারা ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ ধানের দাম না থাকায় তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। বর্ষায় কাজ থাকলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতো বলে মনে করেন তারা।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, হাওর উন্নয়নে সরকার হাওরবাসীর যোগাযোগব্যবস্থা, মিল-কলখারকানা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হাওরবাসীর জন্য যা করার যায় তাই করব।

তার মতে হাওরাঞ্চলের বিশাল নারী গোষ্ঠীকে হস্তশিল্পে পারদর্শী, আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাঁস ও মুরগি লালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে বেকার নারীসমাজ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। তাই হাওরবাসীর উন্নয়নে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/১৭জুন/প্রতিনিধি/এমআর