কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা এখন ভাগাড়

আমিনুল হক সাদী, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০১৯, ১১:৩১

কিশোরগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে নরসুন্দা। মানচিত্রে নদী থাকলেও বাস্তবে পুরোটা নেই। যেটুকু আছে সেটুকুর পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। নদীর মধ্যে কচুরিপানা ও আবর্জনা এবং ময়লা ফেলে একে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। নদীখেকোরা তীর দখল করে বানিয়েছে স্থাপনা। বিভিন্ন সময় এসব স্থাপনা ভাঙার কার্যক্রম শুরু হলেও তা বেশিদূর আগায়নি।

কিশোরগঞ্জবাসীর অনেক আশার একটি প্রকল্পের নাম ‘কিশোরগঞ্জ জেলার নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও পৌরসভা সংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’। মোট বরাদ্দ ছিল ১১০ কোটি টাকা। এই টাকায় নরসুন্দা নদীর ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বড় ছিল হোসেনপুর উপজেলার কাউনা এলাকা থেকে সদর উপজেলার নীলগঞ্জ পর্যন্ত ও শহরের মনিপুর ঘাট থেকে যশোদল এলাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত নদী খনন। অন্যান্য কাজের মধ্যে ছিল নদীর ওই এলাকায় তিনটি পুরোনো সেতুর সংস্কার, ছয়টি নতুন বড় সেতু ও চারটি নতুন পদচারি সেতু নির্মাণ, নদীর পাড়ে ছয় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ২০ কিলোমিটার রাস্তা, আটটি ঘাট ও দুটি বিনোদন পার্ক, একটি ওয়াচ টাওয়ার, মুক্তমঞ্চ, ফুটপাতের বিদ্যুতায়ন ও পথচারী শেড নির্মাণসহ নদীপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন।

২০১২ সালের ২২ নভেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহৎ এ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। দরপত্রের কার্যাদেশ মোতাবেক, প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় জনসাধারণসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিরুদ্ধে জন্য সভা-সমাবেশসহ নানা ধরনের আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্যমতে, নরসুন্দা নদীর দুই পাড়ে সোয়া ছয় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিল সাড়ে ছয় কোটি টাকা। এই টাকায় নদীর উত্তর পাশে শহরের গাইটাল মরাখলা থেকে একরামপুর সেতু পর্যন্ত এবং দক্ষিণ পাশে বড় বাজার সেতু থেকে মরাখলা পর্যন্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। ওয়াকওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের শেষের দিকে। কাজ শুরুর কমবেশি তিন মাসের মাথায় তাতে ধস শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু যেসব এলাকা ধসে পড়ে, তা আর মেরামত করে দেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের হাসপাতাল বটতলা এলাকায় ওয়াকওয়ে ভেঙে কাত হয়ে আছে। সেখানে প্রায় ৩০০ গজ এলাকাজুড়ে ভাঙন চোখে পড়ে। আরও কয়েকটি এলাকায় ওয়াকওয়ের একই অবস্থা। বটতলা এলাকার ব্যবসায়ী আলী আজম বলেন, এখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরপরই ভাঙন দেখা দেয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে, অথচ এই ভাঙন মেরামত করা হয়নি। এখানে পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

নদীর তীরের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম তুষার বলেন, কিছুদিন আগে একরাম ব্রিজ সংলগ্ন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী স্থাপনা তৈরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয় নদীর তীরের সর্বক্ষেত্রেই দখল করে ইচ্ছে মতো স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও। ওয়াকওয়ের মধ্যে উঠেছে দুর্বা ঘাষ। ভেঙে যাচ্ছে নদীর পাড়।

মুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা নকীব বলেন, গুরুদয়াল কলেজের পাশের মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার এলাকাটি মাদকসেবীদের আখড়া, সন্ধ্যার পর তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা এবং ছিনতাইয়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি এই এলাকার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা এবং নরসুন্ধা নদী পুনরুদ্ধারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

শুধু ঘুরতে আসা লোকজনই নয়, কিশোরগঞ্জের প্রতিটি মানুষের দাবি, নরসুন্ধা যেন প্রাণ ফিরে পায়। এ ব্যাপারে তারা কর্তৃপক্ষের সোচ্চার ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।

ঢাকাটাইমস/১৭জুন/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :