বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন

শক্তিশালী পর্যবেক্ষক টিম জরুরি

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ১১:১১ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯, ১১:৩৭

সারওয়ার-উল-ইসলাম

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান শুরু হবে আগামী বছর। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানা রকমের আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ- এই এক বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন ঘোষণা করেছেন।

জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’ এবং জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।’

আমাদের গর্ব, জাতির গর্ব শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জন্মশতবর্ষের এ আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। তাঁর মতো উচ্চতার একজন মানুষের জন্য এমনটাই হওয়া উচিত।

একটি মানুষ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ই জেল-জুলুমে কাটিয়েছেন। নিজের জন্য ভাবেননি কখনো। ভেবেছেন দেশ নিয়ে। ভেবেছেন বাংলার সাধারণ মানুষের কথা।

যাঁর ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয়। অমর কবিতা হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর সেই অলিখিত ভাষণ। কতটা নিখুঁত ছন্দের সেই কবিতা। যার পরতে পরতে ছিল মানুষকে উদ্দীপ্ত করার মতো শক্তি।

এমন একজন মানুষের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে বিপুল অঙ্কের টাকার বাজেট হবে। কমিটিও হবে একাধিক, হবে উপ-কমিটিও। কারণ কিছু সংখ্যক মানুষের পক্ষে এত বড় আয়োজন সামাল দেওয়া কষ্টকর।

তবে হুজুগে যেন এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ঢুকে না পড়ে। এখন তো আওয়ামী লীগে অনেক আগাছা ঢুকে পড়েছে। যাদের দাপটে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেই এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে অনেক ভুঁইফোঁড় সংগঠন গজিয়ে উঠেছে। কোনোভাবে সংগঠনের নামের সামনে বা পেছনে বঙ্গবন্ধু লাগিয়ে সেই সংগঠনকে হালাল করার পাঁয়তারায় মেতে উঠেছে অনেকেই। জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনকে সামনে রেখে এ সব সংগঠন নীরব চাঁদাবাজি শুরু করে দিবে। সাধারণ মানুষের মনকে বিষিয়ে তোলার জন্য যতভাবে চাঁদাবাজি করা যায়, যত কৌশল অবলম্বন করা যায়, সেভাবেই একশ্রেণির ফড়িয়া হাতিয়ে নেবে কোটি কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধুকে পণ্য বানিয়ে ব্যবসা করে নেবে আগামী এক বছরে সুবিধাবাদীরা।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যবসা করবে সংস্কৃতি অঙ্গনের তথাকথিতরাও। যারা সব সরকারের আমলেই দুধের সরটা খেয়ে থাকে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এদের থাকে চমৎকার বোঝাপড়া। সব দিক ম্যানেজ করে এরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়।

সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ম্লান করার জন্য ঘাপটি মেরে থাকা সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী তাদের কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর এই আয়োজনে যাতে কোনো অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে আর অর্থের স্বেচ্ছাচারী উৎসবে পরিণত না হয়, এখনই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জন্মশতবার্ষিকীর এ আয়োজনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষক টিম থাকা প্রয়োজন। এবং দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখতে হবে, যেন কোনো ভুঁইফোঁড় সংগঠন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের নাম করে চাঁদাবাজি করতে না পারে। নজর রাখতে হবে অপশক্তির ব্যাপারেও। কারণ এই আয়োজনে দেশের গুণীজনসহ বিশ্বের অনেক নামিদামি মানুষকে জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেসব অনুষ্ঠানে অপশক্তি যাতে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত হবে অনেক সংকলন। সেসব সংকলনে নানা মতের লেখকরা লিখবেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। সেই লেখাগুলোতে যাতে ইতিহাস বিকৃত করার কোনো চেষ্টা না থাকে সেদিকেও দেশের দক্ষ সম্পাদক আর ইতিহাসবিদদের নজর রাখতে হবে। একটি শক্তিশালী প্রকাশনা কমিটিও করা যেতে পারে কেন্দ্রীয়ভাবে। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে সংকলনই বের করা হবে, তার কনটেন্টগুলো প্রকাশ করার জন্য সেই কমিটি কর্তৃক অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো সংকলন বের করা যাবে না। 

সর্বোপরি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে খুবই পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বাংলাদেশের ইতিহাস আগামীতে যারা রচনা করবেন তাদের জন্য যেন এই উদ্যাপন অনুষ্ঠান একটি দলিল হিসেবে কাজে লাগে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমরা জাতির পিতার একটি সুন্দর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান দেখতে চাই। যেখানে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। কোনো প্রকার বিভেদ নয়, কারণ বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দলের নন, পুরো জাতির। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই সরকারের পক্ষ থেকে সবার অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারলেই পরিপূর্ণতা পাবে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান।

লেখক: ছড়াকার ও সাংবাদিক