আমরা টাহার দ্যাশের মানুষ
প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ১৭:৫৬ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯, ১৮:০৭
পণ্য দ্রব্যের দামে ইউরোপকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ জার্মানিরও চেয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাংলাদেশে বেশি। ইউরোপের যেকোনো দেশেই এক ইউরোতে দুই লিটার দুধ পাবেন। ঢাকাতে তো ৯০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি হয়। মিল্ক ভিটা এবং আড়ংয়ের মতো ভেজাল মিশ্রিত দুধের লিটার ৬৫ টাকা। ঢাকাতে হাড়সহ যে গরুর মাংশের দাম ৫৫০ টাকা, ইউরোপে সেটা সাড়ে তিন ইউরো থেকে ৫ ইউরো। মানে ৫০০ টাকার নিচে। হাড়ওয়ালা ভেড়ার মাংশ ইউরোপে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক ইউরোতে মিলে এক লিটার সয়াবিন।
হাড়বিহীন মুরগির মাংশ দুই থেকে তিন ইউরোর মধ্যে। ডিমের দাম বাংলাদেশ ও ইউরোপে প্রায় সমান। দুধ সস্তা হওয়ায় দুগ্ধজাত পুণ্য যেমন পনির চিজ, ঘি ইত্যাদির দাম বাংলাদেশের অর্ধেক। বাংলাদেশে মধূর লিটার ৬০০ টাকাও বিক্রি হয়। প্যারিসের সুপারশপগুলোতে এক লিটার মধুর দাম ৩ ইউরো দেখেছি।
পানির দেশে পানির দামেও আগুন। জার্মানি, প্যারিস কিংবা লন্ডনে দেড় লিটারের ৬টা পানির প্যাকের দাম দেড় ইউরো। পতুর্গাল, ইতালিতে যেটা মাত্র এক ইউরো। মানে এক বোতলের দাম ১৫ টাকা। বাংলাদেশে হাফ লিটারের দামই তো ১৫ টাকা!টয়লেট ও টিসু পেপারও বাংলাদেশের চেয়ে সস্তা এখানে। প্যারিসে ১৬টা টয়লেট পেপারের প্যাকেটের দাম সাড়ে তিন ইউরো।
প্রসাধনী সামগ্রী ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যও বেশ সস্তা ইউরোপে। তবে সবচেয়ে সস্তা হলো খাদ্যপণ্য। হরেক রকম সুস্বাধু পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, চকলেট এতটাই সস্তা যে ইচ্ছে করে এগুলো কিনে জাহাজ ভরে দেশে নিয়ে যাই।
ফলমুলের কথা আর কি বলবো। পোলান্ডের ওয়ারশ থেকে সুস্বাদু চেরি কিনেছি এক কেজি এক ইউরোতে। জার্মানিতে দেড় থেকে দুই ইউরো। ইতালি, পর্তুগালে আরও সস্তা। ইংল্যান্ডে বড় বড় ৮টি আপেলের প্যাকেট এক পাউন্ডেও বিক্রি হয়। যেটার ওজন দেড় কেজির কম হবে না। জার্মানিতে একটি সরকারী ফলের বাগানে ঘুরেছি। গাছ ভর্তি পিচ, চেরি, আপেল। কিন্তু খাওয়র মানুষ নেই। আপনি চাইল বস্তা বস্তা বাসায় নিয়ে আসতে পারবেন। কেউ আপনাকে কিছু বলবে না।
পরিবহন ও সেবা খাতও খুব সস্তা। বেলজিয়াম থেকে প্যারিসে সাড়ে চার ঘন্টার পথ বাসে এসেছি মাত্র ১০ ইউরোতে। আবার প্যারিস থেকে লন্ডন- আট ঘন্টার রাস্তার টিকিট কেটেছি ১৪ ইউরোতে। লন্ডন থেকে ওয়ারশ গিয়েছি রায়ান এয়ারে। আড়াই ঘন্টার পথের টিকিটের দাম মাত্র ২৪০০ টাকা। বালিন থেকে বাসেলস বিমানে এসেছি মাত্র ১২০০ টাকায়।
লন্ডন থেকে ৫ পাউন্ডে সিম কার্ড কিনেছি দিন রাত কথা বলে টাকাই শেষ হচ্ছে না। লন্ডন তথা সারা ইউরোপে টক টাইম পেয়েছি ৫০০ মিনিট এবং বাংলাদেশে ৫০০ মিনিট। সঙ্গে ইন্টারনেট সুবিধে তো আছেই।
ইউরোপে একজন একজন শ্রমিক বেতন পান প্রায় দুই লাখ টাকা, বাংলাদেশে সেখানে দশ হাজার টাকা। ইউরোপে মাত্র দুই দিনের বেতনে সারা মাসের খাবার হয়ে যায়। আর বাংলাদেশে একজন শ্রমিককে সামান্য ডাল ভাতের পেছনেই ব্যয় করতে হয় দশ দিনের আয়।
বাংলাদেশটা আসলে বড়লোকদের, ঢাকা ওয়ালাদের । আজব এক দেশ বটে! নেতাদের মুখে শুধু বড় বড় কথা। এই ভন্ড নেতাদের রুখবে কে? এই সমাজটাকে পাল্টাবে কে? এভাবেই কি চলবে হতভাগা বাংলাদেশ? সাধারণ মানুষের কষ্ট কি শেষ হবার নয়?
(ঢাকাটাইমস/১৭ জুন/ডিএইচ)