হাইকোর্টকেও ‘পাত্তা দেন না’ রাজা কাসেম

এম হাশেম তালুকদার
 | প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০১৯, ০৮:২৭

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে উত্তর সলিমপুর মৌজার সমূদ্র উপকূলে বিবিসি স্টিল নামে একটি শিপইয়ার্ডের নির্মাণকাজ চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী এম এ কাসেম রাজা ওরফে রাজা কাসেম। গত ১৩ মে সোমবার এই শিপইয়ার্ড নির্মাণ কাজ বন্ধের আদেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু থামেননি কাসেম। তিনি নির্মাণ কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন।

কাসেম সীতাকু- উপজেলার উত্তর সলিমপুর মৌজায় উপকুলীয় বন বিভাগের জায়গা সমুদ্র সিকস্তি বালুচর দেখিয়ে এক নং খাস খতিয়ান মুলে ৭.১০ একর জমি ইজারা নেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে। বাংলা ১৪২৬ সালের ৩০ চৈত্র (২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল) এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

কিন্তু ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বনের ১৯৫ একর জমি লোহার তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখল করার অভিযোগ আছে কাসেমের বিরুদ্ধে। গাছপালা কেটে পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ১২ ফুট চওড়া সড়কও নির্মাণ হয়। খনন করা হয় বড় দিঘী। উপকুলীয় বাঁধের উত্তর পাশে জনসাধারণের ভিটে নাল জমি ও পুকুর জবরদখলের অভিযোগ আছে। সেখানে মাটি ভরাট করে পাকা ভবন ও নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা ভয়ে কিছু বলতেও পারে না।

স্থানীয়রা পরে যান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের কাছে। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়ে ইজারা বাতিলের অনুরোধ জানান। সীতাকু- ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন একই দাবি জনিয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনও করেন। কিন্তু কিছুতেই থামেননি রাজা কাসেম।

সম্প্রতি বনের জমি দখল ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের কেওড়া গাছ কেটে সড়ক নির্মাণ কাজে বাঁধা দিতে গেলে উপকুলীয় বনের কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হয় কাসেম রাজার লোকরা। এ নিয়ে সীতাকু- থানায় মামলা করেন বন কর্মকর্তা আবু তৈয়ব।

বন কর্মকর্তা জানান, ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে উত্তর সলিমপুর মৌজায় বন বিভাগ ৪০০ একর ম্যানগ্রোভ বাগান গড়ে তোলে। সেখানে বর্তমানে ১৫-২০ হাজার গাছের ঘন বন আছে। এই জায়গা সমুদ্র সিকস্তি ভূমি দেখিয়ে ১৯৫ একর জমি ইজারা চেয়ে আবেদন করেন কাসেম রাজা। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৭.১০ একর বনভূমি বরাদ্দ করে। যেখানে গাছ কেটে সড়ক নির্মাণ ও ভুমির শ্রেণি পরিবর্তনে বাঁধা দিলে বনকর্মীদের লাঞ্চিত করেন তিনি। দেশের শীর্ষ সবকটি পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সবগুলো গাছ কেটে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মাওলা বলেন, বনের স্বার্থ, গেজেটের নিষেধাজ্ঞা কিছুই না মানার কারণে কাসেম রাজাকে বিবাদী করে মামলা করা হয়। এর স্বপক্ষে হাইকোর্টে রিট করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি-বেলা।

গত ১৩ মে সোমবার হাইকোর্টে এই রিটের শুনানি হয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের যৌথ বেঞ্চে। এতে বেলার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমেদ কবীর সৌরভ।

শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিবিসি স্টিলের ইজারা ছয় মাসের জন্য বাতিল করে। পাশাপাশি এই ইজারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন।

আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কেউ যদি আদালতের আদেশ অমান্য করে কাজ তা হলে সেখানকার সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো বসে আছে কেন? কেন আইন অমান্যকারীকে নোটিশ দিচ্ছে না? বন বিভাগ তাকে থামাচ্ছে না কেন? পুলিশ বিভাগ থামাচ্ছে না কেন? তারপরও যদি তার কাজ অব্যাহত থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃগক্ষ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করবে। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বনের ওই জমিতে শিপইয়ার্ড নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। এ বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে।’

আদালতের রায়ের পর এম এ কাসেম রাজা ওই জমিতে জাহাজ কাটার স্থাপনা গড়ে তোলেছেন। সড়ক দুটির মেরামত কাজ অব্যাহত রেখেছেন। জাহাজ ভাঙা শিল্পের প্রয়োজনীয় স্থাপনা তিনি নির্মাণ করে চলেছেন। তার পক্ষের লোকজনের পাহারায় এসব কাজ চলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এম এ কাসেম রাজা উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, ‘আমি আইনগত ভাবে সব কিছু ঠিক করে কাজ চালাচ্ছি। আপনাদের যা লেখার লিখতে পারেন। প্রশাসন থেকে আদালত সবাই আমার পক্ষে আছে। কেউ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।’

ঢাকাটাইমস/১৮জুন/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :