উত্তরখানে সব অপরাধে নেতৃত্ব দিত চক্রটি
নেশার টাকা জোগাড় করতে মোবাইল ছিনতাইয়ে গিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। বাধা দেয়ায় সাকিব হোসেন ও শিপন মিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। সাকিবের মৃত্যু হলেও হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর মুখোমুখি শিপন।
রাজধানীর উত্তরায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা হলেন- শাহীন মিয়া ওরফে ব্ল্যাক শাহীন, মঞ্জুরুল ইসলাম মিজু ও ফরহাদ হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন- কাশেম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে জমি দখল-খুনের মতো অপরাধ করত অনায়াসেই। উত্তরখানে ঘুরতে আসা লোকদের অস্ত্রের ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ছিনতাই করা চক্রটির পেশায় পরিণত হয়েছিল। তারা ভাড়ায় খুন, জমি দখলের মতো ঘটনায় জড়িত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।’
ঘটনার দিন রাজধানীর উত্তরখানে বাটুলিয়া নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন দুই বন্ধু সাকিব ও শিপন। এসময় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নেশার টাকা জোগাড় করতে দুই বন্ধুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে ছিনতাইকারীরা সাকিব হোসেনের বুকে ও পিঠে ধারালো ছোরা (সুইচ গিয়ার) দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত এবং শিপনের পিঠে গুরুতর জখম করে।’
র্যাব জানায়, নিহত সাকিব হোসেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। ছোটবেলায় তার মা মারা যাওয়ার পর তার পিতা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি। সাকিব হোসেন এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। তিনি উত্তরার ৭নং সেক্টরে ফড়িং নামক পোশাক শো-রুমে কাজ করতেন। নিহত সাকিব হোসেন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
আহত শিপন মিয়া পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বড় এক ভাই ও ছোট তিন বোন রয়েছে। তার পিতা সুলতান মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রি। পরিবারের খরচ পিতার একার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বিধায় তিনি উত্তরা ৩নং সেক্টরের সাইনটেক্স নামক একটি পোশাক শো-রুমে চাকরি নেন।
গ্রেপ্তার শাহীন মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ২০১৫ সালে টঙ্গী সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন থেকে এসএসসি পাস করার পর পড়ালেখা বন্ধ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক বিক্রিতেও জড়িত। তার বিরুদ্ধে উত্তর ও দক্ষিণখান থানায় একাধিক ছিনতাই, মারামারি ও মাদক মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিন ব্ল্যাক শাহিন, মিজু ও ফরহাদ ছাড়াও জিয়া, তানভীর, রুবেল, মিঠু, সবুজসহ ৭-৮ জন ঘটনাস্থলে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করছিলেন।
গ্রেপ্তার ফরহাদ হোসেন পেশায় টিউবওয়েল মিস্ত্রি। তিনিও এ চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। তিনি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মাদকাসক্ত। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই ও খুনের মামলা রয়েছে।
আরেক আসামি মঞ্জুরুল ইসলাম মিজু সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে পেশায় বাইপাইল-সায়েদাবাদ রুটে দোয়েল পরিবহনের হেলপার। এর আগে তিনি আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন। তিনি এ চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ সিও বলেন, উত্তরায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি। তাছাড়া ছোট ছোট কারণে খুনে মতো ঘটনাও ঘটছে। উত্তরায় নানা শ্রেণির মানুষের বসবাস। সেখানে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের আনাগোনার কারণে অপরাধপ্রবণ মানুষের সংখ্যাও বেশি। উত্তরখানে ঘুরতে আসা লোকদের অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করা চক্রটির পেশায় পরিণত হয়েছিল। তারা ভাড়ায় খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/এসএস/জেবি)