ইউডা ছাত্র সংসদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুসরণীয়

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০১৯, ২১:১৪

মিঠুন রেজাউল হান্নান

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৩ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। আর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে চাকরির বাজারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরাই অগ্রগামী।

অর্থ্যাৎ, ভবিষ্যতে যারা আমাদের চালিকাশক্তি হবেন তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্টের (হেকেপ) আওতায় দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) গঠনের মাধ্যমে কয়েক বছরব্যাপী একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার মাধ্যমে গুণগত শিক্ষাদান নিশ্চিত হতে পারে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি বিষয় উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। সেটা হলো শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশের সুযোগ দেওয়া। এ বিষয়টি একজন শিক্ষার্থীর কর্মজীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘করপোরেট পরিবেশে’ শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের বিকাশের সুযোগ পায় না।

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ না থাকলেও বিভিন্ন ক্লাব বা সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেওয়া কিংবা সম্মিলিতভাবে কাজ করার বাস্তবিক ধারণা পায়। কিন্তু বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাও পাওয়া যায় না।

ক্লাসে আসা, ক্লাস করা, সেমিস্টার বা ক্রেডিট অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করা- এভাবে চলতে চলতে একসময় সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে সেটা নিয়ে চাকরির খোঁজ করা।  আমার জানামতে এটাই বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বর্তমান হালচাল। এটা যে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে হচ্ছে, সেটা অবশ্যই না। আরো নানাবিধ কারণ রয়েছে বা থাকতে পারে।

তবে নানা সামাজিক বাধা থাকলেও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) ব্যতিক্রম। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সীমিত আকারে হলেও শিক্ষাথীদের এ সুযোগ দিচ্ছে।

ইউডার প্রতিটি বিভাগ থেকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় ইউডা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। এ সংসদে একজন বিভাগীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তার বিভাগের সব ব্যাচ প্রতিনিধিদের ভোটে। আর একটি বিভাগের ব্যাচ প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন স্ব স্ব ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ভোটে।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সদস্য কিংবা ব্যাচ প্রতিনিধি হওয়ার জন্য দুটো যোগ্যতা দরকার হয়। প্রথম যোগ্যতা হলো ভালো ফলাফল, দ্বিতীয়টি হলো শিক্ষার্থীদের ভোট। এ দুই যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতি বছরই ছাত্র সংসদ গঠিত হয়।

ইউডার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে পদাধিকারবলে সভাপতি হন ইউডার ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। ইউডার উপাচার্য সংসদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সভায় প্রতিনিধি শিক্ষার্থীরা সব শিক্ষার্থীর বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিত রাখা হয় যাতে সমস্যাগুলো শোনার পর তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কোনো নির্দেশনা দিতে চাইলে এ সভায় উপস্থিত প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

এই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত বা বহির্ভূত নানা উদ্যোগ নেয় ও বাস্তবায়ন করে।

বছরের পর বছর ধরে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ২৫ মার্চের রাতে শহীদদের স্মরণ অনুষ্ঠান, জাঁকজমকপূর্ণ পহেলা বৈশাখ-বিজয় দিবসসহ নানা দিবস উদযাপন, শিক্ষা সফরসহ বছরব্যাপী অসংখ্য কর্মসূচি সুশৃঙ্খল ও সুনামের সঙ্গে পালন করে আসছে ইউডা ছাত্র সংসদ। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বিভিন্ন উপলক্ষ সামনে রেখে একসঙ্গে হয়ে সব পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে থাকে। কোনো কোনো সময় তারা ড্রেসকোডও একসঙ্গে মিলে ঠিক করে।

শুধু তাই নয়, নিয়মিতভাবে ক্লাস পরিচালনায় কর্তৃপক্ষকে সহয়তা করা, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কোনো শিক্ষার্থী বা ইউডার কোনো সদস্যের বিপদে এগিয়ে আসে ইউডা ছাত্র সংসদ। কোনো কারণে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হলে বা অন্য কোনো জটিল মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ছাত্র সংসদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এ কারণে নানা উত্তপ্ত সময়েও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরাও নিরাপদ ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ও নিরাপদ ছিল।

আমার মতে, ছাত্র সংসদের বিষয়ে দেশের অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউডাকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে পারে। এটা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যেমন সুন্দর থাকবে, তেমনি উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা। এ ধরনের ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভালো কাজ সম্মিলিতভাবে করতে উৎসাহ দেয়।

লেখক: সাংবাদিক