স্মার্টফোন আমদানি চাই না: মোস্তাফা জব্বার

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০১৯, ১১:২৬ | আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯, ১১:৪৪

আসাদুজ্জামান

স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে এর দাম বাড়ানোর উদ্যোগের কারণ এই পণ্য বিদেশ থেকে আনা নিরুৎসাহিত করা। সরকার চাইছে দেশে এখন যেভাবে আটটি কোম্পানি ফোন সংযোজন করছে, তেমনি অন্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোও কারখানা স্থাপন করুক।

আগামী বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজারে স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলে সেটি কার্যকর হয় সঙ্গে সঙ্গে। ফলে এখন থেকে যারাই আমদানি করুক, এই শুল্ক প্রস্তাব সংশোধন না হলে তাদেরকেই বাড়তি অর্থ খচর করতে হবে। স্বভাবতই ভোক্তাদেরকে বেশি দামে কিনতে হবে। কেন দাম বাড়াতে চাইছে সরকার? জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ  মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তারা চান দেশেই উৎপাদিত হোক এই পণ্য। আর আমদানি শুল্ক না বাড়ালে কখনোই এদেশে বিদেশি কোম্পানি কারখানা খুলবে না। ঢাকাটাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার এ কথা বলেন তিনি।

তরুণদের একটি বড় অংশই স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ফোনের শুল্ক বাড়লে তো তারা চাপে পড়বে। এতে কি ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি বাঁধাগ্রস্ত হবে না?

দেশে এখন আটটি স্মার্টফোন কারখানা আছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি স্যামসাংও আছে। এসব কারখানায় পুরোদমে স্মার্টফোন উৎপাদন হচ্ছে।  তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের আগ্রযাত্রা কখানোই বাধাগ্রস্ত হবে না। আমদানি নির্ভরতা কমলে বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ আরো সমৃদ্ধ হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে এই না যে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে হবে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত স্মার্টফোন কি বিশ্বমানের?

নিঃসন্দেহে। আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চুল পরিমান খারাপ না। দেশে উৎপাদিত স্যামসাং ফোন আন্তর্জাতিক মান মানের। আন্তর্জাতিক মান বাজায় রেখেই দক্ষিণ কোরিয়ার  স্যামসাং ফোন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে।

দেশে যে আটটি কারখানায় স্মার্টফোন উৎপাদন হচ্ছে তাতে দেশীয় চাহিদার কতটুকু মিটছে?

বাংলাদেশে কারখানা হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। এরই মধ্যে দেশীয় হ্যান্ডসেটের ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে এই আটটি কারখানা। আমার বিশ্বাস আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের শতভাগ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। 

স্মার্টফোন আমদানিকারকরা বলছে, ফোন আমদানতে শুল্ক বাড়ানোর ফলে স্মার্টফোনের দাম বাড়বে, চাহিদাও কমবে।

আমাদের স্মার্টফোন আমদানি করতে হবে কেন? দেশের পণ্যের বাজার তৈরির জন্যই আমরা লড়াই করেছি। আমার নিজের দেশে যে পণ্য উৎপাদিত হয় সে জিনিস আমরা কেনো আমদানি করব। স্যামসাংয়ের পথ ধরে অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে কারখানা করুক। আমি আমার নিজের দেশের টাকা কেন বিদেশি কোম্পানির পেছনে খরচ করব? আমরা কি দেশের মানুষের  কর্মসংস্থানের দিকে তাকাব না?

আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্যই কি স্মার্টফোন আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে?

হ্যাঁ, আমরা যদি দেশে স্মার্টফোন তৈরির কারখানা না করি তবে সারাজীবনই আমাদের আমদানি নির্ভর থাকতে হবে। কিছু বিদেশি কোম্পানি চিৎকার কারছে আমদানি শুল্ক কেন বাড়ানো হলো এর জন্য। তারা আসলে চাইছে আমাদের দেশের মানুষের কষ্টার্জিত আয় বিদেশি পাঠাই এবং আমরা উৎপাদক না হই।  আমরা কী কারণে আমদানি নির্ভর থাকব? পৃথিবীর কোনো দেশেই আমদানি নির্ভর থাকতে চায় না। আমরা যতদিন উৎপাদন করতে পারি নাই ততদিন তো আমদানিই করেছি। এখন তো আমরা উৎপাদন করছি।

তাহলে বলা যায়, সুলভে বাংলাদেশের গ্রাহকদের স্মার্টফোন সরবরাহ করতে হলে বিদেশি কোম্পানিকে দেশে কারখানা খুলতে হবে?

অবশ্যই। আমি বিদেশি স্মার্টফোন কোম্পানির উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আপনারা স্যামসাংয়ের মতো বাংলাদেশে কারখানা খুলুন। এদেশেই ফোন তৈরি করে তা বিক্রি করুক।

বিদেশি কোম্পানি দেশে স্মার্টফোন কারখানা খুললে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবে?

বিদেশি কোম্পানি যাতে দেশে হ্যান্ডসেট কারখানা চালু করে এজন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এসব কারখানার জন্য যন্ত্রাংশ আমদানিতে ০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।  ওই কোম্পানি যদি হাইটেক পার্কে কারখানা খোলে তবে ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে পাবে। এ ছাড়াও দেশে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করলে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটেভ পাবে।