মানুষ পরিমাপের মাপকাঠি!

জাহিদুল ইসলাম সজিব
 | প্রকাশিত : ১৯ জুন ২০১৯, ১২:৫৪

জীবনে এই প্রথম অভিজ্ঞতা হলো মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কোনো নবজাতককে দেখার। গতরাতে ঢাকা মেডিকেলে এক বড় ভাইয়ের ব্লাড ডোনেশনের কল্যাণে সুযোগ হয়। আমি সব সময়ই সুযোগসন্ধানী। কোনো সুযোগই মিস করতে চাই না, যদি সেটা হয় জীবনকে জানার তাহলে তো কোনো কথাই নাই।

নবজাতকের বয়স তখন ২০ মিনিট। অন্ধকার মাতৃগর্ভ থেকে সদ্যই পৃথিবীতে। তখনও চোখ মেলে তাকায়নি। কিন্তু তার চেহারা থেকে ১০ মিনিটের অবজারভেশনে যে জিনিসটা দেখতে পারলাম- সেটা হচ্ছে তার এক্সপ্রেশনগুলোতে একাধারে ছিল হাসি, কান্না, মান, অভিমান, দুঃখ, কষ্ট, বিরহ। এই নিয়েই তো আমাদের জীবন! যেন সে দুনিয়াতে এসেই বুঝে গেছে অনাগত দিনগুলোতে এসবই তার নিয়তি হতে চলেছে। এসবের মিশেলে এক জীবনই পেতে যাচ্ছে সে।

মিনিট বিশেকের এই অবজারভেশনে আরও একটি উপলব্ধি- যে জীবনের শুরুই হয় কান্না দিয়ে, সে জীবনে সুখের অনুসন্ধান করে লাভ নাই। জগত সংসার বড়ই অদ্ভুত জিনিস। আপনি শত চেষ্টা করেও পরিপূর্ণ হতে পারবেন না। আপনি যত বড়ই হোন না কেন আক্ষেপ আর অপূর্ণতা আপনাকে গ্রাস করবেই।

তো, বলছিলাম সদ্য ভূমিষ্ষ্ঠ নবজাতকের কথা। চেহারায় এখনও স্পষ্ট দীর্ঘদিন মাতৃগর্ভের অন্ধকারে থাকার নিদর্শন। হাতের মুঠো এখনও সাদা স্যাঁতসেঁতে। আমি বারবার ভাবছিলাম শিশুটির পরিচয় নিয়ে। তার এখনকার পরিচয় কেবলই নবজাতক! কদিন পরেই দুনিয়ার নিষ্ঠুরতায় নিজেকে সে আবিষ্কার করবে কোনো সরকারি আমলার সন্তান হিসেবে কিংবা কোনো সরকারি প্রতাপশালী নেতার সন্তান হিসেবে অথবা কোনো কৃষক বা রিকশাওয়ালার সন্তান হিসেবে!

অথচ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের ১/২ দিন পর্যন্ত আমরা ভুলেই যাই নবজাতকের জনক আমলা নাকি কামলা। এটাই হওয়া উচিত ছিল। কারণ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ও মানুষের মৃত্যুর সময় প্রতাপশালী রাজাও ভুলে যায় তার নিজের পরিচয়ের কথা। ক্ষণিকের জন্য হলেও আনমনে হয়ে যান সৃষ্টিকর্তার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের প্রতি। তার মনেও ভাবনারা খেলা করে আমার জন্মও হতে পারত কোনো এক প্রজার ঘরে!

নিজের পরিচয় নিয়ে যারা অতি ফ্যান্টাসিতে ভোগেন কিংবা গর্ব করেন নিজেকে একজন এসপি, ডিসি, ম্যাজিস্ট্রেট ভেবে-প্লিজ চলুন আরও একবার নবজাতক ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সঙ্গে সময় কাটাই- নিজের আসল পরিচয় পেয়ে যাবেন।

স্বল্প শিক্ষিত আর অল্প জ্ঞানের মানুষ হিসেবে তাই মনে করি- কে আমলা আর কে কামলা এসব দিয়ে মানুষ মাপতে যাবেন না। মানুষকে যদি মাপতেই চান তাহলে তার মাঝে বিদ্যমান মানবিক গুণাবলী ও সততাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরতে পারেন।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :