কুটুমবাড়িতে ‘দুশমনি’ (ভিডিও)
কুটুম হিসেবে ডেকে নিচ্ছে, ওপরে ওপরে আপ্যায়নের কমতি নেই। কিন্তু আসলে কী দিচ্ছে তা কি জানেন? পচা, দুর্গন্ধযুক্ত খাবার নতুন করে গরম বা রান্না করে পরিবেশ করা হতো সেখানে।
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের প্রখ্যাত কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে এই চিত্র দেখতে পেয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত কয়েক বছর ধরে এই রেস্তোরাঁটি বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়, বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে। দল বেঁধে বন্ধুরাও খেতে যান এই রেস্তোরাঁয়। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে দ্বিতীয়বার ওইমুখী হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
অভিযান পরিচালনাকারী দল রেস্তোরাঁর রান্না ঘরে ঢুকতেই দেখে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের চিত্র। রান্না চুলার ওপর জমে আছে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ ময়লা। চুলার আশপাশে যে এক ময়লার আস্তরণ। পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। আর তার মধ্যেই রান্না করা হচ্ছে খাবার।
রান্নাঘরে পাওয়া গেছে মুরগির পচা মাংস, বুট, নুডুলস। বেশ কিছু খাবার এতটাই পচা ছিল যে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।
অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘এখানে যা পাওয়া গেছে তাকে খাবার বলা যায় না।’
ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান অভিযানের বিষয়ে বলেন, ‘আজ আমরা যেক’টি জায়গায় অভিযান করেছি তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখানে। শুধু মাত্র কুটুববাড়িতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা পাওয়া গেছে। আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ জরিমানা করেছি এবং ফুটপাতের উপর নির্মাণ করা তাদের সিঁড়িটি ভেঙে দিয়েছি।’
অভিযানের সময় রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ফলে তাদের সাথে এবিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এর আগে মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড এলাকা থেকে শুরু হওয়া অভিযানে প্রথমেই জরিমানা করা হয় ক্যাফে বাগদাদ নামে রেস্তোরাঁকে। সেখানে চোখে পড়ে রান্নাঘরের অস্বাস্থকর পরিবেশ। পাওয়া যায় পচা বাসী খাবার। মানহীন খাদ্য বিক্রির দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং সতর্ক করেন ম্যাজিস্ট্রেট।
পাশের মুসলিম সুইটমিটে গিয়েও অগ্রহণযোগ্য পরিবেশ দেখা যায়। সেখানে মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত তেল খাওয়ার অনুপযোগী বলে প্রমাণ মেলে। এক লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি তেলগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
এরপর অভিযানকারী দলটি পৌছায় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এলাকায়। সেখানে তাজ কিচেন নামের একটি রেস্তোরাঁয় উন্মুক্তভাবে খাদ্য সামগ্রী রাখায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে না পারা আর মানহীন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি করায় বিএফসিকে জরিমানা করা হয় এক লাখ টাকা।
অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আজ আমরা মোট পাঁচটি রেস্তোরাঁয় অভিযান করেছি। সবগুলোতে প্রায় একই ধরনের সমস্যা পাওয়া গেছে। নিয়মিত অভিযানের কারণে সমস্যা আগের তুলনায় কমে এসেছে।’
ফুটপাত উচ্ছেদ
অভিযানকালে মোহাম্মদপুর বসিলা রোডে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসা শতাধিক দোকান ও স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে ডিএনসিসির অভিযান পরিচালনাকারী দল। মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম জামে মসজিদের সাথে তিন ফলের দোকান, গরীবুল্লাহ মার্কেটের সামনে দুটি টং দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
অবৈধ ভাবে রাস্তার ফুটপাত দখল করে পাখির খাঁচা রেখে ব্যবসা করার অপরাধে অশি পাখির দোকান নামের একটি দোকানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সময় ফুটপাত আংশিক দখল করার দায়ে অনেক ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে আমরা এটা করেছি। আমাদের কাছে আগে থেকে তথ্য ছিল, তাই আমরা মানুষের চলাচলের স্বার্থে অভিযান করছি।’
ঢাকাটাইমস/১৯জুন/কারই/ডব্লিউবি