পার পাচ্ছেন না ডিআইজি মিজান

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০১৯, ১৮:৪২ | আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯, ২১:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেরিতে হলেও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে বঙ্গভবনে পাঠানো হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে গোটা প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্বের কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। বলেছেন, ডিআইজির বিরুদ্ধে উঠা প্রতিটি অভিযোগেরই আলাদা বিচার হবে।

ডিআইজির বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এক নারীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করা, বিয়ে গোপন করতে প্রভাব খাটিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা, টেলিভিশন উপস্থাপিকা ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে ৬৪ টুকরো করা, ওই নারীর নামে ফেসবুকে অশালীন ছবি ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে বারবার সংবাদ হয়েছে। সব শেষ দুর্নীতির মামলার তদন্ত নিজের পক্ষে তিনে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার মতো কাজের কথা তিনি নিজে সদর্পে ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছিরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হচ্ছে তদন্ত। তবে ডিআইজি মিজান এখনো স্বপদে বহাল। পুলিশের সাবেক প্রধান ও বর্তমানে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলছেন, এটি পুলিশের মর্যাদার বিষয়। মিজানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।  

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঢাকাটাইমসকে জানান, তার মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে। এতে বরখাস্তের সুপারিশ করা হচ্ছে।

কবে এই প্রস্তাব যাবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘বরখাস্তের জন্য কিছু ধাপ পার হতে হয়। সে জন্যই কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

মিজানের বিরুদ্ধে তো অভিযোগের কমতি নেই। এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি অপরাধের আলাদা আলাদা বিচার হবে।’

পুলিশে একজন কর্মকর্তা জানান, পদস্থ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। সে কারণে মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তবাটিও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হচ্ছে।

অভিযোগ ও তদন্ত

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক নারীকে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ উঠে ডিআইজির বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ওই বছরের শেষ দিতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে নেয়া হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদরদপ্তর।

২০১৮ সালের শুরুর দিকে সে প্রতিবেদন জমা পড়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সোয়া এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

মিজানুরের বিরুদ্ধে করা সংবাদ পাঠিকার অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে কমিটি প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগের সত্যতা পায়। কমিটির কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ডিআইজি জানান, ওই সংবাদ পাঠিকা পরিকল্পিতভাবে তাঁর আবেগের সুযোগ নিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে তাঁকে উত্তেজিত করেছেন। ফলে তিনি নিজে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে কিছু ‘অপ্রত্যাশিত’ শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। তবে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান।

ওই সংবাদ পাঠিকার অভিযোগ, ‘চন্দ্র মল্লিকা’ ও ‘দেশী মাল’ নামে দুটি ফেসবুক আইডি খুলে সেখানে তার আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়। এর পেছনেও ডিআইজি মিজানের হাত থাকার অভিযোগ ছিল। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই অভিযোগের তদন্ত নিয়ে কিছু বলছে না।

এ ছাড়া গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিজানকে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিপুল সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। আর এই সময় মিজান ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তিনি তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন।

ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এএ/ডব্লিউবি