নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে খাদে টেনে নিচ্ছে: ইসি মাহবুব

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০১৯, ১৮:৪৪ | আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯, ২০:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে- এমন দাবি করে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ। এই অবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না।'

বুধবার বিকালে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে লিখিত বিবৃতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম ধাপের নির্বাচন শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজের লিখিত প্রতিক্রিয়া জানান।

তার মতে উপজেলা নির্বাচন একতরফা হয়েছে, ভোটারদের ভোট দিতে আগ্রহ ছিল না। নির্বাচন নিয়ে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ করার চেষ্টারও সমালোচনা করেন আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা। একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত এবং তা বহুত্ববাদের ভেতর থেকে উৎসারিত হতে হয়।'

ইসি বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো অভিব্যক্তি প্রতিফলিত হয় না বলে এর কোনো ঔজ্জ্বল্য থাকে না। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতির জন্য নির্বাচন বিমুখতা অশনিসংকেত। যথোপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।'

মাহবুব বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় শামিল হতে চাই না। নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ। এই অবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না।'

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমরা সংবিধান অনুযায়ী মুক্ত স্বাধীন উপজেলা পরিষদের কার্যকারিতা দেখতে চাই। কারো আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্ব পালন করলে এবং উপজেলা পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বিসর্জিত হলে উপজেলা পরিষদ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ প্রশ্ন নির্বাচনের ভালো-মন্দ নিয়ে নয়, নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে আদৌ নিয়মরক্ষার নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি? এই নেতিবাচক প্রশ্নের উত্তর থেকে আমরা ইতিবাচক পথের সন্ধান পেতে চাই।’

বিবৃতির শুরুতে তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) পাঁচটি ধাপে এবারের উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকরা আমার অভিমত জানতে চেয়েছেন। এসব নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সে বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে আমি পূর্বে যা বলেছিলাম, এখনো তা-ই বলব, আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করলে এর উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছেই এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।’

উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘উপজেলা নির্বাচন সংসদ সদস্যদের আওতামুক্ত না হলে তা কখনো অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের উপদেষ্টার ভূমিকা উপজেলা পরিষদের কৌলিন্য বিনষ্ট করেছে। অনেক সংসদ সদস্য কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পছন্দের প্রার্থীকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসাতে চান, কখনো বা নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন, এ প্রশ্নের সমাধান না পেলে উপজেলা নির্বাচন তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবের কবলে পড়বেই।’

ইসি মাহবুব বলেন, ‘কোনো কোনো সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।'

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/বিইউ/জেবি)