উচ্ছেদ আতঙ্কে শাহপরী দ্বীপের দুই শতাধিক জেলে পরিবার

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০১৯, ২২:২৫

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের জালিয়াপাড়ার ভূমিহীন দুই শতাধিক পরিবারের দিন কাটছে উচ্ছেদ আতঙ্কে। তাদের উচ্ছেদের জন্য সাত দিনের নোটিশ দিয়েছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে নদীর তীরে যুগযুগ ধরে বসবাস করা এসব ভূমিহীন জেলে পরিবারগুলো চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে। অন্যদিকে সরে যাওয়ার জন্য বর্ষা পর্যন্ত সময় চেয়ে এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ভূমিহীন পরিবারগুলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পাউবো কর্মকর্তারা শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ায় অবস্থিত দুই শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ দেন। কক্সবাজার পাউবো উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ নোটিশে বলা হয়েছে- সাত দিনের মধ্যে বাঁধের আশপাশে নির্মিত ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সরিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। ওইদিন বাঁধের পাশে বসবাসরত শতশত ভূমিহীন জেলে বর্ষা পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে মানববন্ধন পালন করেন।

মানববন্ধনে ভূমিহীন জেলেরা দাবি করেন, নাফনদের তীরে তাদের অনেকের স্থায়ী বসতভিটা ছিল। নদী ভাঙনে সেই বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলে সর্বস্ব হারিয়ে তারা বেড়িবাঁধের পাশে এসে অস্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। এখন বর্ষা মৌসুমে তাদের উচ্ছেদ করা হলে কোথাও আশ্রয় নেয়ার মতো সুযোগ পাবে না তারা।

জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল গণি বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কার বা সীমান্ত নিরাপত্তা সড়ক নির্মাণ কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরাও চাই এই কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সুষ্ঠু কাজের স্বার্থে অন্যত্র সরে যেতে। কিন্তু যে সাত দিন সময় দেয়া হয়েছে, এত কম সময়ে এই জেলে পরিবারের ভূমিহীন মানুষগুলোর অন্যত্র সরে যাওয়া সম্ভব না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, অন্তত বর্ষা পর্যন্ত বসবাস করার সুযোগ দেয়া হোক।

সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে দুই শতাধিক পরিবারের বসতি রয়েছে। এদের সবাই ভূমিহীন এবং দরিদ্র জেলে। এমনিতে নাফনদে প্রায় দুই বছর ধরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় নাফনদ নির্ভর এসব জেলেরা মানবেতর দিন যাপন করছে। এ মুহূর্তে তাদের বসতি উচ্ছেদ করা হলে ‘মড়ার উপর খড়ার ঘা’ এর মতো অবস্থা হবে।

তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ পরিবারের অন্যত্র বসতি স্থাপন দূরে থাক, বর্তমানে অবস্থান করা বাড়িঘর বা স্থাপনাগুলো ভাঙার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করা অসহায় ভূমিহীন জেলেদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হলেও তাদের দ্রুত পুনর্বাসনে সরকারের সহযোগিতা দরকার।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফের নাফনদ বরাবর পোল্ডারসমূহের আওতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে। তাই কাজের স্বার্থে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ায় বাঁধের উপর স্থাপিত ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা সড়ক নির্মাণের কারণে বেড়িবাঁধের পাশের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে সেখানে যেসব বসতি রয়েছে, তাদের বর্ষাকালে অন্যত্র চলে যাওয়া কঠিন হলে আমার বরাবর তারা যদি একটি আবেদন করে তাহলে মানবিক বিবেচনা করে তাদের অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে তাদের সরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প সুযোগ নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এলএ)