উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ‘উন্মুক্ত’ নকল

প্রকাশ | ২১ জুন ২০১৯, ১৭:৩৬

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন (বাউবি) এইচএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় বাধাহীন ভাবে নকল করার তথ্য মিলেছে।

গফরগাঁওয়ের কান্দিপাড়া আব্দুর রহমান ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান এইচএসসি পর্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় শুক্রবার এমন চিত্র দেখা গেছে। সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের সমাজকর্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র শুক্রবারেই পরীক্ষা হয়।

পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কারও সামনে রয়েছে পুরো বই। কারও সামনের বইয়ের ছেঁড়া পাতা। এভাবেই বই দেখে উত্তরপত্রে লিখছে সকল পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষার্থীরা অবাধে বইয়ের পাতা বেঞ্চের ওপরে রেখে তা দেখে দেখে উত্তরপত্রে লিখছে। আবার কেউ কেউ পুরো বইটাই বেঞ্চের ওপর রেখে উত্তরপত্রে লিখছে। আবার একজন পরীক্ষার্থীর সামনে থাকা বই বা বইয়ের পাতা দেখে কয়েকজন পরীক্ষার্থী লিখছে। কিন্তু তা প্রতিরোধে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

পরীক্ষার কেন্দ্রে এই প্রতিবেদককে ঢুকতে দেখে এগিয়ে এসে এক কর্মচারী পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দোহাই দিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেন। সংবাদকর্মী পরিচয় পাওয়ার পর কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি মিললেও পরীক্ষার হলে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি।

দীর্ঘ সময় অফিস কক্ষে বসে থাকার পর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরীক্ষার হল ঘুরে দেখার অনুমতি মেলে। এ সময় কৌশলে তাদের চোখ এড়িয়ে মুঠোফোনে অবাধে বই খুলে লেখার ছবি ধারণ করা হয়। এ সময় পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা দু-তিনজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই বুঝতেই তো পারেন। এখানে কী ধরনের পরীক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। আপনি থাকলে থাকায় তাদের সমস্যা হচ্ছে, তাই চলে গেলে ভালো হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘যাদের কোনো উপায় নেই, তারাই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়। শিক্ষা নয়, সার্টিফিকেট পাওয়াটাই মূল লক্ষ্য। এসব কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে কিছুটা নকল করার সুযোগ না দিলে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই ফেল করবে। আর ফেল করলে বাউবিতে ছাত্র-ছাত্রী অনেক কমে যাবে।’

তবে এই পরীক্ষার্থীর দাবি অন্য বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষায় অনেকটাই নকল কম।

কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, বাউবির পরীক্ষা কেন্দ্রটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সে কারনেই পরীক্ষার্থীরা অবাধে নকলের সুযোগ পাচ্ছে। কেন্দ্রটি উপজেলা সদরে থাকলে অবাধে নকলের সুযোগ পেত না কোন পরীক্ষার্থীই। নকল কমাতে চাইলে অবশ্যই কেন্দ্র পরিবর্তন করে উপজেলা সদরে আনতে হবে।

এ ব্যাপারে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান বলেন, ‘আপনি এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন, আমিও বলব।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বাউবির পরীক্ষার ব্যাপারে আপনি যেভাবে বলেছেন, মানুষও এভাবেই বলে। আর ওই কেন্দ্রে উম্মুক্ত নকল হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে আমি বাউবির পরীক্ষার কোন দায়িত্বে নেই।’

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/ডব্লিউবি)