মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কি নিরাপদ ও কার্যকর থাকে?

মুনিরুদ্দীন আহমেদ
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০১৯, ১৮:৪০

আমার এই স্ট্যাটাসের উদ্দেশ্য মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের পক্ষে সাফাই গাওয়া নয় বা গ্রহণের পরামর্শ দানও নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সম্পর্কে কিছু তথ্য উপস্থাপনই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য।

আসলে কী ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পর নষ্ট হয়ে যায়? নাইট্রোগ্লিসারিন, ইনসুলিন, তরল অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কিছু সংবেদনশীল ওষুধ ছাড়া বেশির ভাগ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পরও কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা অনেক দিন ঠিক থাকে।

আমি একবার মেয়াদোত্তীর্ণের প্রায় তিন মাস পর প্যারাসিটামল খেয়ে পূর্ণ কার্যকারিতা পেয়েছি, আমার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ার পর আমি ইন্টারনেট অনুসন্ধান করে দেখলাম- আমার ধারণা সত্যি।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে চমৎকার কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালের এক আইন মোতাবেক ওষুধ কোম্পানিগুলো অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধের ওপর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখপূর্বক একটি সীল দিয়ে থাকে, যার মাধ্যমে বলা বা নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে এই সময়ের মধ্যে ওষুধটি গ্রহণ করা হলে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত থাকবে এবং এই সময়ের পর গ্রহণ করলে কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা শতভাগ নাও পাওয়া যেতে পারে।

মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সম্পর্কে একটি চমৎকার ঘটনা বলি। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অনুরোধে এফডিএ একটি গবেষণা চালায়। সেনাবাহিনীকে বিপুল পরিমাণ খুব দামি ওষুধ সংরক্ষণ করতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের এই ওষুধ ধ্বংস করে ফেলতে হয়। এই বিশাল অংকের অর্থ সাশ্রয়ে কিছু করা যায় কি না তা দেখা ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য।

গবেষণায় দেখা যায় ১০০ টিরও বেশি ওটিসি ও প্রেসক্রিপশন ড্রাগের ৯০ শতাংশ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হওয়ার ১৫ বছর পরও কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা ঠিক পাওয়া গিয়েছিল।

ঠান্ডা জায়গা, যেমন রেফ্রিজেরেটর ও নির্দেশিত পরিবেশে রাখা হলে ওষুধের কার্যকারিতা বহু বছর অক্ষুন্ন থাকে।

তাহলে প্রায় ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এত কম হয় কেন? আরও প্রশ্ন হলো- কোম্পানিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসের পরিবর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অক্ষুন্ন গুণগত মানের ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ বর্ধিত করে বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে কি না।

নাকি তারা ইচ্ছে করেই ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ কম রেখে ওষুধের কাটতি ও মুনাফা বাড়াতে চায়?

এ নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে। সম্ভবত এফডিএ এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু ভাবছে।

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :