দেশের সব অর্জন আ.লীগের হাত ধরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০১৯, ০৮:৩১

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো কি? রাজনীতির নানা দিক নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যে এই একটি প্রশ্নে বরাবর রাজনৈতিক সমালোচকরাও দলটিকে কিছু বলতে পারেন না।

পাকিস্তানের শাসনামলে ১৯৪৯ সালের আজকের দিনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতিটি লড়াই আর দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বও দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে শীর্ষ নেতাদেরকে হত্যা করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরও আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে বরাবরই অটল।

জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনও গড়ে তুলেছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দলটিই। আবার বাংলাদেশের মর্যাদাকর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বীকৃতি ও অর্জনের বেশিরভাগই এসেছে এই দলেরই শাসনামলে। তাই আওয়ামী লীগের নেতারা গর্বভরে বলেন, বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের ভিত পুরোটাই রচনা করেছে এই দলটি।

প্রতিষ্ঠার পর পথ পরিক্রমায় আরও একটি বছর পার হলো আর আজ রবিবার আওয়ামী লীগ উদযাপন করছে তার ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেদিন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক হন। কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে করা হয় যুগ্ম সম্পাদক।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেন ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল- ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।’

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান দলের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

পাকিস্তান আমলের ভূমিকা

পাকিস্তানের ২৪ বছরের মধ্যে ২২ বছর আন্দোলন সংগ্রামে কাটাতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। আর বাঙালির চাওয়া পাওয়ার সমীকরণ মেলাতে সবচেয়ে বেশি খাটতে হয়েছে এই দলটিকেই।

২৪ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী মুসলিম লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দুই বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার ছিল।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ।

শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।

আওয়ামী লীগ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।

প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্বপাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

ওই বছরের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এর মধ্যে, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ পেয়েছিল ১৪৩টি আসন। আর এই নির্বাচনের পর পাকিস্তানপন্থী দল মুসলিম লীগ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কখনও।

তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে নেয় আওয়ামী লীগ।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

স্বাধীন বাংলাদেশে বিপর্যয় ঘুরে দাঁড়ানো

মুক্তিযুদ্ধের পর পর দেশ শাসনের ভার পড়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাতেই। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, এরপর ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া চার নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী ও এএইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যার পর দলে সামরিক শাসনামলে দলে ভাঙন দেখা দেয়।

এর মধ্যে জিয়াউর রহমান সেনাশাসন জারি করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। আর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করে আওয়ামী লীগ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলীয় সভাপতি নির্বাচন করা হয়। আর দেশে ফিরে কয়েক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন তিনি।

এর মধ্যে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ১৯৮২ সালে আরেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও দখল করেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। আর এরশাদবিরোধী ৯ বছরের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যায় শেখ হাসিনার দল। তবে ক্ষমতায় ফিরতে আর দেরি হয়নি। পরের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জিতে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দলটি।

এর পাঁচ বছর পর আবার ছন্দপতন। ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যায় সদ্য ক্ষমতা ছাড়া দলটি। যদিও দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।

২০০৬ সালে আবার বিএনপি-জামায়াতবিরোধী আন্দোলনে নামে দলটি। আর জারি হয় জরুরি অবস্থা। এই অবস্থাতেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়ী হয়ে সরকারে ফেরে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ক্ষমতায় ফেরা সহজ হয় দলটির জন্য। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :