জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াবে প্রস্তাবিত বাজেট: সিপিডি

উন্নয়নে খুশি মানুষ: পরিকল্পনামন্ত্রী

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০১৯, ১৬:৪৩

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। সেই তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে দেশের ধনশালীরা।

রাবিবারল রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সিপিডি বাজেট ডায়লগ ২০১৯: অ্যান অ্যানালাইসি অব দ্য ন্যাশনাল বাজেট ফর ২০১৯-২০’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য তুলে ধরেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

প্রতিবেদনটিতে প্রস্তাবিত এ বাজেটের কড়া সমালোচনাও করে বলা হয় হয়, চলতি অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে প্রস্তাবিত অর্থবছরে কৃষি ও এ সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তবে সরকার তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা সব ক্ষেত্রে মানা হয়নি। ইশতাহরে সরকার কৃষকদের বন্ধকমুক্ত ঋণ দেয়ার দেয়ার কথা বলেছিল, তবে বাজেটে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বাজেটে সরকার ‘কৃষি বিমা’ চালুর যে প্রস্তাব করেছে, সেটিকে সাধুবাদ জানিয়েছে সিপিডি। এটিকে দ্রুত বাস্তবায়নেরও দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০০৯-১০ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করে সিপিডি বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটের আকারে বরাদ্দ কমেছে। ওই সময় মোট বাজেটের ১২ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল। নতুন এ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্লেষণে বলা হয়, গত বছরের মোট বাজেটের যত অংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল, তার চেয়ে কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনেও কমেছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ বেড়েছে। তবে তাতে কোনো নতুনত্ব নেই। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে, সেই হারে বাড়ছে না বলেও উল্লেখ করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং প্রতিরক্ষায়ও বরাদ্দ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় তাতে।

এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, সিপিডির বিশেষ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাসহ অনেকে সিপিডি বাজেট সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘বিগত ১০ বছরে দেশের টানা যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। প্রথমদিকে দেশের অবস্থা ভালো ছিল না। এখন দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।'

জনগণের অংশগ্রহণমুলক বাজেট হয়নি, এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে যাই। গ্রামের সাধারণ জনগণের সাথে মিশেছি। আমি জানি মানুষ সরকারের উন্নয়নে সন্তুষ্ট। সরকারের প্রতি দেশের মানুষ আশাবাদী।'

এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো এ দেশের দারিদ্রতা দূরীকরণ। এর জন্য স্বাক্ষরতার মতো বড় একটা বিষয় জড়িত। দারিদ্র্য দূর করতে হলে শিক্ষা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য সেবাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’

‘বিদ্যুতের উন্নতি হয়েছে, লোডশেডিং কমে এসেছে। তবে দেশে এখনো ১১ শতাংশ হত দরিদ্র আছে এটা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু দারিদ্র্যের হার কমেছে। এছাড়া হাওর অঞ্চলের মানুষের জন্য বাজেট পরিকল্পনা করা সম্ভব হয় না। কারণ আমরা কার মাধ্যমে এসব সুবিধা হাওর অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দেব, এমন কোনো সংস্থা নেই। আপনার সংঘবদ্ধ হয়ে আসেন, আমরা এসব বিষয়ে দেখব।'

বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয় বরং ব্যবসায়ীবান্ধব- এমন কথার সূত্র ধরে মন্ত্রী বলেন, 'ব্যবসাবান্ধব বা ব্যবসায়ীবান্ধবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আপনারা যেটাই বলেন, বিষয়টা একই। ব্যবসায়ীরা লাভবান হলে, ব্যবসা লাভবান হবে স্বাভাবিক।'

মন্ত্রী বলেন, 'ভ্যাট ট্যাক্স এসব বিষয়ে এখন আর পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা বাড়াতে বাজেটে অর্থের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আর শ্রমিকদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।'

অনুষ্ঠানে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সাংসদ রুমিন ফারহান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র কমার হার কমেছে। দরিদ্র ও ধনীদের মধ্যে এই যে বৈষম্য বাড়ছে, এটা কমানোর ব্যাপারে এই বাজেটে কিছুই বলা নেই।’

‘বাজেটে ঘাটতি এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ও আভ্যন্তরীণ ঋণের কথা বলা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে ৬৪ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ ঋণ যদি ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হয়, তাহলে দেশের বিনিয়োগের অবস্থা কী দাঁড়াবে? বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে উল্লেখ করে এ সাংসদ বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে, যে প্রত্যাশা ছিল এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে, সেটার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।’

ঢাকাটাইমস/২৩জুন/জেআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :