আমার স্বদেশ যেন থাকে দুধে ভাতে

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০১৯, ১৭:৪৭

অনিমেষ চক্রবর্তী

আজ ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্বের নেতৃত্ব দানকারী দলটির ৭০ বছর পূর্ণ হলো।

মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।” শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল- ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। “আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।”

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান এবং পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে দলটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ৬৪-এর দাঙ্গা পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোসহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পরবর্তীতে দেশে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে এবং ২০১৪ সালে দশম এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সু-সংগঠিত এবং শক্তিশালী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি সব সময় আপামর জনতার কথা বলা সংগঠনটি আজ বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশ্বের সকল শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বরে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ আর আওয়ামী লীগ আজ অবিচ্ছেদ্য। আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, দুধে ভাতের বাংলাদেশ।

শুভ জন্মদিন জনতার আওয়ামী লীগ।

ভালো থাকুক শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ।

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।