বিবিএসকে বিশ্বমানে নিয়ে যাবে এনএসডিএস

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০১৯, ১৯:১৮

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হাতে নেয়া হয়েছে ‘জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র (এনএসডিএস)’ শীর্ষক প্রকল্প । এই প্রকল্প বিবিএসকে বিশ্বমানে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনব্যাপী ‘এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক ওয়ার্কশপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ডেনডেন চেন। বৈদেশিক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের আওতাধীন এশিয়া-প্যাসিফিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট জাপানের পরিচালক আশীষ কুমার, ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক ব্যুরো অফ ভুটান'র পরিচালক চিমি সিরিং প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয় , ‘ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট’ এর মাধ্যামে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সার্বিক সক্ষমতা বাড়ানোর হবে। দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা এর মাধ্যমে বিশ্বমানে উন্নীত হবে। নীতি নির্ধারক, পরিকল্পনাবিদসহ অন্যান্য তথ্য ব্যবহারকারী যাতে যথাসময়ে মানসম্পন্ন সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন , কোনো ফিগার বাড়িয়ে বলবেন না, যা আছে তাই বলবেন। কেউ যেন বলতে না পারে ডাটা ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর উদৃত দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোনো তথ্য বাড়িয়ে দেখানো যাবে না। যা আছে তাই উল্লেখ করতে হবে। '

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কারো যদি সন্দেহ থাকে, সে তার সন্ধান করুক। তার সঙ্গে আমাদের কোনো বিবাদ নেই। আমরা বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করি বাংলাদেশ পারবে, পারছে। পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে। দারিদ্র্যের যে শিলাখণ্ড তা ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, যারা লুটেপুটে খেয়েছে তারাই এখন নসিয়ত করবে। আমাদের সত্যবাদী হয়ে কাজ করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে বিবিএস মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, এনএসডিএস প্রকল্পটি বিবিএসের সার্বিক সক্ষমতা বাড়াতে ও আধুনিক, কার্যকর এবং সময়োচিত পরিসংখ্যান প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে। এনএসডিএস ও পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ এর মাধ্যমে সরকার বিবিএসের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে এ প্রকল্পটি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন। তিনি বলেন, এনএসডিএস একটি বৈশ্বিক ধারণা যার উৎপত্তি ২০০৪ সালে মরক্কোর মারাকাস শহরে। তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রমকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে মূলত এ ধারণার সৃষ্টি হয়। বিশ্বব্যাপী এনএসডিএস প্রণয়নের মূল উদ্যোক্তা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। সরকার দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা তথা বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি সুদৃঢ় করাতে চায়। এ লক্ষ্যে পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ প্রণয়ন করে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাস্তব ভিত্তিক একটি এনএসডিএস প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রমাণভিত্তিক, বাস্তবসম্মত ও সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা দরকার। সময়োচিত ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংকলন এবং প্রকাশনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ এনএসডিএস গ্রহণ করে।

দিলদার হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে হলো সঠিক, নির্ভরযোগ্য, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিসংখ্যান প্রণয়ন। এ লক্ষ্যে বিবিএস পরিচালিত প্রধান প্রধান জরিপসহ অন্যান্য পরিসংখ্যানগত কার্যক্রমের পরিচালনা পদ্ধতিকে যুগোপযোগী করা। দ্রুততম সময়ে তথ্য সংগ্রহ, সংকলন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে যথাসময়ে তথ্য বা রিপোর্ট প্রকাশ করা। তথ্য সংগ্রহ থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্যে একটি আইসিটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। ‘সীমাবদ্ধ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিসংখ্যান প্রস্তুতের লক্ষ্যে জরিপের পরিবর্তে ‘প্রশাসনিক উৎস’ থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ। এজন্য তথ্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা।

প্রকল্প পরিচালক দিলদার বলেন, দাপ্তরিক পরিসংখ্যান প্রণয়ন একটি টেকনিক্যাল বিষয়। একাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য দক্ষজনবল অপরিহার্য। তাই বিবিএস-এ কর্মরত সব ধরনের জনবলকে দেশে-বিদেশে নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলা। এ ছাড়াও জাতীয় হিসাব প্রাক্কলন, পরিবেশ পরিসংখ্যান তৈরি, জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার তৈরি, জেন্ডার স্ট্যাটিসটিক্স প্রণয়ন, বিবিএসের সব শুমারি ও জরিপের সংজ্ঞাও মেথডলজি আধুনিকায়নে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিবিএস সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বিবিএস সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই ২০১৩ সরকার এনএসডিএস ও পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ প্রণয়ন করে। বর্তমানে বিবিএস আগের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ, কার্যকর এবং দ্রততার সঙ্গে পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও প্রকাশ করছে।

এ সময় তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ইন্ডিকেটরগুলো যথাযথ পরিবীক্ষণ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে সরকারকে তথ্য-উপাত্ত প্রদানে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে একটি সমন্বিত পরিসংখ্যান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবো। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান প্রস্তুতকারী অন্যান্য সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে যাতে করে সরকারি পরিসংখ্যানকে অধিকতর ব্যবহার উপযোগী, গ্রহণযোগ্য ও সহজলভ্য করা যায়।

ঢাকাটাইমস/২৩জুন/জেআর/আরএ

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :