ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের প্রতিবেদন

মানহীন দুধ-ঘি বিক্রি করছে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং

নিজস্ব প্রতিদেক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ জুন ২০১৯, ১৮:৩৭ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৯, ১৫:৫৫
বাজারে বিক্রি হওয়া প্রাণ, মিল্কভিটা ও আড়ং,ইগুলসহ পাস্তুরিত সাতটি দুধ মানহীন বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ। এসব দুধে মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্ম এবং কিছু দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব মিলেছে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের টিনে বিক্রি হওয়া ঘিতেও মান কম পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার ঢাবির ফার্মেসি বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের মোকাররম ভবনের পাশে বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে অবস্থিত ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে দুধ ছাড়াও ফ্রুট ড্রিংকস, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, ঘি, গুঁড়া মশলা, শুকনা মরিচ, হলুদ, পাম অয়েল নিয়েও পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
পাস্তুরিত দুধের সতটি নমুনা হলো- মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। আর অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে।
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, আমরা যে ফলাফল দিয়েছি তা নমুনার ফলাফল। তার মানে এই না যে ওইসব কোম্পানির সব পণ্যই এরকম। আমরা কিন্তু থাকবো না মরে যাবো, যদি এভাবে যত্রতত্র এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হয়। এন্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো ওই গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে আপনারা এখনই গরুকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করুন।
এসব দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই মানবচিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও অপাস্তুরিত দুধের একটি নমুনাতে ফরমালিনও পাওয়া মিলেছে। অন্য একটিতে পাওয়া গেছে ডিটারজেন্ট।
এছাড়া বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ফ্যাট ইন মিল্ক থাকতে হবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। বিশ্লেষণে পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার মধ্যে ছয়টিতেই এই পরিমাণে ফ্যাট ইন মিল্ক ছিল না। সলিড নট ফ্যাট থাকতে হবে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু বিশ্লেষণে এসব দুধের সবগুলোতেই কম ছিল।
আর টোটাল ব্যাকটেরিয়া কাউন্টও ছিল পাস্তুরিত দুধের সবগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কলিফর্ম কাউন্ট পাস্তুরিত দুধের দু’টি নমুনাতে ছিল অনেক বেশি। আর স্টেফাইলোকক্কাস স্পেসিজ শূন্য থাকার কথা থাকলেও পাস্তুরিত দুধের পাঁচটিতে এর জীবাণুর উপস্থিতিতো ছিলই, এমনকি এর পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। অর্থাৎ, বিএসটিআই মানদণ্ড এসব দুধের সবগুলোই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ম্যাংগো ড্রিংস নিরাপদ নয়
ফ্রুট ড্রিংকসের মধ্যে স্টারশিপ ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, সেজান ম্যাংগো ড্রিংক, প্রাণ ফ্রুটো, অরেনজি, প্রাণ জুনিয়র ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, লিটল ফ্রুটিকা ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, সানড্রপ, চাবা রেড অ্যাপল, সানভাইটাল নেকটার ডি ম্যাংগো, লোটে সুইডেন্ড অ্যাপল ড্রিংক ও ট্রপিকানা টুইস্টার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কৃত্রিম মিষ্টিকারক সাইক্লামেট ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও ১১টি পণ্যের সবগুলোতেই এর ব্যবহার ছিল অতিমাত্রায়।
সয়াবিন তেলেও ঝামেলা
সয়াবিন তেলের মধ্যে রূপচাঁদা, ফ্রেশ, পুষ্টি, তীর, এসিআই পিওর, ভিওলা, মুসকান ও মিজান এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তেলের অ্যাসিড ভ্যালু, স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু, পারক্সাইড ভ্যালু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। আয়োডিন ভ্যালু আটটি নমুনার চারটিতে কম ও একটিতে বেশি পাওয়া গেছে। জলীয় উপাদান আটটি নমুনাতেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
টিনের ঘিয়ে ভেজাল
বাজারে প্রচলিত ৮টি ঘিয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। এগুলো হলো- বাঘাবাড়ি, প্রাণ, মিল্কভিটা, মিল্কম্যান, সমির ও টিনে বিক্রি হওয়া নামবিহীন দু’টি নমুনা। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ঘিয়ে জলীয় উপাদান ও আয়োডিন ভ্যালু যতটুকু থাকার কথা রয়েছে এসব নমুনায় তার থেকে বেশি পাওয়া গেছে। আর তিলের তেলের কোনো উপস্থিতি থাকতে পারবে না উল্লেখ থাকলেও এসব পণ্যের সবগুলোতেই এর উপস্থিতি ছিল। এ বিবেচনায় আটটি নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাও মানহীন দুধ বিক্রি করছে-সেক্ষেত্রে মানুষ কি খাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা টাইমসকে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমারও একই প্রশ্ন আমরা কি খাবো? কিন্তু এই প্রশ্ন কার কাছে করব। সত্য কথা হলো অসাধু বাণিজ্য যার হাতে পড়বে, তারা এমনটা করবেই। সে সরকারি হোক-কি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর থেকে উত্তরণে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে মানহীন পণ্যই মানুষ কিনে খেতে বাধ্য হবে।’
আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে কিছুদিন পরে ফলাফল তুলে ধরি। কিন্তু যারা নীতিনির্ধারণী আছেন তারা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারেন।’
(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/বিইউ/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :