বগুড়ায় জামানত হারাচ্ছেন জাপার সাবেক এমপিসহ পাঁচ প্রার্থী

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৯, ২০:২৯ | আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯, ২১:২০

এনাম আহমেদ, বগুড়া
সাবেক সাংসদ ও জাপার সাবেক চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমরও জামানত হারাচ্ছেন।

 

ইভিএম পদ্ধতিতে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রার্থী প্রশ্ন তোলেননি। ভোটের ফলাফল নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেননি কেউ। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ৩৪.৫৫% থাকলেও ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে শুধুমাত্র শতকরা ৩৪.৫৫% ভাগ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সংসদে কথা বলার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করেননি, বরং বগুড়ায় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের সমর্থন কেমন সেটাও প্রকাশ করেছেন। আর বাকি ৬৫ ভাগ ভোটারদের ভোটের প্রতি বিশ্বাস, প্রার্থীদের প্রতি বিশ্বাস বা আগ্রহ ছিলো না ন্যূনতম সেজন্যই হয়তো তারা ভোট দিতে যাননি এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। আর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া এ নির্বাচনে জামানত হারাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাবেক চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমরসহ প্রাঁচ প্রার্থী।

সম্প্রতি শেষ হওয়া বগুড়ার উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জিএম সিরাজ ধানের শীষ প্রতীকে ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টি জামান নিকেতা ৩২ হাজার ২৯৭ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। বেসরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার পর থেকেই বগুড়ার রাজনৈতিক পাড়া এবং ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইয়ে যাচ্ছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে বেগম খালেদা জিয়ার পেয়েছিলেন ১লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৩। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আলহাজ মমতাজ উদ্দিন পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ৬৩৪ ভোট। ১০ বছরে এ আসনে ভোটারবৃদ্ধি এবং দলের কর্মী বৃদ্ধির পরেও এই নির্বাচনে দলের পক্ষে ভোট কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আ.লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে। 

এদিকে জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে সেই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সোমবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭০ ভোট। সেই অনুযায়ী জামানত ফেরত পেতে প্রার্থীকে ১৬৭৩৩ ভোট পেতে হবে। কিন্তু পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অপর পাঁচ প্রার্থীর কেউ সেই পরিমাণ ভোট পাননি।

ফলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৫ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাবেক চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর। তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ২৭১ ভোট। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে নুরুল ইসলাম ওমরকে সদর আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সে সময় বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদীয় এলাকায় তার জনপ্রিয়তা সেভাবে কখনই ছিলো না।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তিনি স্থানীয় সরকারের ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি এলাকায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়নমূলক কাজ জনগণকে না দেখাতে পারায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ভরাডুবি ঘটে। তিনি বিএনপি প্রার্থী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর বিপরীতে ভোট পান ৪০ হাজার ৩৬২ ভোট। বিপরীতে ধানের শীষ প্রতীকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেয়েছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ২৫ ভোট।

এবারের নির্বাচনে মহাজোট থেকে আওয়ামী লীগ প্রথমে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে টি জামান নিকেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু সুযোগে সৎব্যবহার করতে নুরুল ইসলাম ওমর জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনের মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। নির্বাচনের পর প্রদত্ত মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় তাকে জামানত হারাতে হচ্ছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে নির্বাচন করে তিনি ৪০ হাজার ৩৬২ ভোট পেয়ে জামানত ফেরত পেয়েছিলেন।

নুরুল ইসলাম ওমর ছাড়াও জামানত হারাচ্ছেন আরো ৪ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলীম লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম হারিকেন প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫৪ ভোট। তিনি গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) থেকে নির্বাচন করে ৫ হাজারের বেশী ভোট পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মনসুর রহমান ডাব প্রতীকে ৪৫৬ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ কবির আহম্মেদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন। ট্রাক প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ৬৩০ ভোট। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মিনহাজ মন্ডল বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২হাজার ৯২০ ভোট।


ঢাকাটাইমস/২৫জুন/ইএস