মেঝেতে রক্তাক্ত শার্ট, খোঁজ মিলছে না বিদ্যালয়ের প্রহরীর

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৯, ২২:১৪

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক নৈশ প্রহরীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার নাম ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮)। মঙ্গলবার সকালে স্কুলের বারান্দা থেকে তাঁর রক্তমাখা টিশার্ট, মশারি, বালিশ ও মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি স্কুলের বারান্দার মেঝেতে রক্তের মোটা দাগও দেখা যায়।

পরিবার জানায়, রাতে স্কুলের বারান্দায় মাদকসেবীরা আড্ডা বসাত, যা অপছন্দ করতেন প্রহরী ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮)। ধারণা করা হচ্ছে এর জেরে মাদকসেবীরা তার কিছু একটা করেছে।

জানা যায়, দীর্ঘ সাত বছর ধরে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াকুব আলী শেখ। স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানের ব্যয় বহন করতে দিনে শহরের দক্ষিণ আলীপুরের একটি সেলুনেও কাজ করেন তিনি। নিজ পরিবারে একটু স্বাচ্ছন্দ্য আনতে দিন-রাত পরিশ্রম করা ইয়াকুবের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়েই এখন যত সংশয়।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইয়াকুব আলী শেখ। সেখান থেকে স্কুলের ডিউটি করতে সন্ধ্যায় রওনা হন শহরে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্কুল থেকে ইয়াকুবের পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, স্কুলের বারান্দায় রক্ত পড়ে আছে, কিন্তু ইয়াকুবের কোনো খোঁজ মিলছে না। এরপর ইয়াকুবের স্ত্রী তার মা ও ভাইদের নিয়ে স্বামীর খোঁজে স্কুলে ছুটে আসেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম বলেন, ‘সকালে স্কুলে প্রথম আসেন ঝাড়ুদার দুলাল জমাদ্দার। তিনি এসে স্কুলের গেট বন্ধ পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে আমার বাড়িতে আসেন। পরে দপ্তরি রেজাউল করিমকে ডেকে এনে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করি। এ সময় স্কুলের বারান্দায় ইয়াকুবের গায়ের রক্তাক্ত শার্ট, ফ্লোরে কয়েক জায়গায় অনেক রক্ত ও মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও ইয়াকুবের পরিবারকে খবর দেই।’

ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই এখানে (স্কুলে) ডিউটি করতে চাচ্ছিলেন না তিনি (ইয়াকুব)। এখানে গত জানুয়ারি মাসেও কম্পিউটার ল্যাবে চুরি হয়েছে। তাছাড়া মাদকসেবীদের প্রচুর আড্ডা হতো। এগুলো ইয়াকুব পছন্দ করতেন না। অনেকবার স্কুলে নালিশও করেছে। এছাড়া ওর কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো ঝামেলা ছিল না।

ইয়াকুবের শ্যালক মিনারুল ইসলাম বলেন, দুলাভাই গত কয়েকদিন ধরে খুব ভয়ে ছিল। কারণ স্থানীয় মাদকসেবীরা রাতে স্কুলের বারান্দায় মাদকের আসর বসাত। এগুলোতে বাধা দিতেন তিনি। এই কারণে দুলাভাইয়ের বেশ শত্রুও তৈরি হয়েছিল। কয়েকদিন আগে দুলাভাই আমাকে বলেছিল- আমার স্কুলে যেতে ভয় করে। রাতে ঘুম আসলে কখন যে ওরা কী করে ফেলে তার ঠিক নাই। তুই আমার সঙ্গে চল, রাতে আমার সঙ্গে থাকবি।

ইয়াকুবের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বলেন, মাঝে মধ্যে মাদকসেবীরা রাতে উৎপাত করত। বিষয়টি ইয়াকুব আামাদের জানালে আমরা এই এলাকায় থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে মৌখিকভাবে তা জানাই। পরে পুলিশ মাদকসেবীদের কয়েকবার ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোতয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আলামত দেখে মনে হয়েছে ইয়াকুবের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোতয়ালি থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৫জুন/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :