ডায়াবেটিস মোকাবেলায় ভিন্ন চিন্তা

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৯, ০৮:৩৮

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

ডায়াবেটিস অনেক মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ইনসুলিন প্রয়োগ করে এই রোগের চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও সুখকর নয়। বাড়তি ওজনসহ অনেক সমস্যা দেখা দেয়। নতুন কিছু ওষুধ এই সমস্যা কিছুটা লাঘব করছে।

সুসানে রিপের জীবনে অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। পেশায় তিনি ডাক্তারের চেম্বারে সাহায্যকারী। তিনি ক্রোন রোগে ভুগছেন। ওষুধ খাবার আগে তার ওজন ছিল ৫৫ কিলোগ্রাম। এখন ২০ কিলো ওজন বেড়েছে। ফলে ৩ সাইজ বেশি মাপের জামাকাপড় পরতে হচ্ছে। তিনি বলছেন, তার মুখ গোল হয়ে ফুলে গেছে।

২০১১ সালে তার ক্রোন রোগ ধরা পড়ে। অন্ত্রনালীর এই সমস্যার মোকাবেলা করতে তাকে কর্টিসন ওষুধ খেতে হয়। তাতে লাভ হয়, প্রদাহ বা জ্বালা দূর হয় বটে, কিন্তু সেইসঙ্গে ওজন বাড়তে থাকে। কয়েক মাস পর তিনি বুঝতে পারেন, কর্টিসনের কারণেই এমনটা হচ্ছে।

বাতরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে গাব্রিয়েলা রিমেকাস্টেন এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। রিউম্যাটিক ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের দ্রুত মোকাবেলা করতে হলে তিনি কর্টিসন প্রয়োগ না করে পারেন না। তবে তিনি ওষুধের মাত্রা যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করেন। রিমেকাস্টেন বলেন, ‘প্রদাহের জন্য সব সময়ে শক্তির প্রয়োজন হয়। এখন সেই প্রদাহ কমাতে বা পুরোপুরি দূর করলে মনে রাখতে হবে, যে আগের পরিমাণে খাবার খেলে আপনার ওজন বেড়ে যাবে। কারণ তখন আপনার তত শক্তির প্রয়োজন হয় না।’

কর্টিসন তাছাড়া স্ট্রেস হরমোন হিসেবে শরীরকে সঙ্কেত পাঠায়। ফলে শরীর ভবিষ্যতে কঠিন সময়ের জন্য আগে থেকেই বেশি খেতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। সুসানে রিপে এই প্রক্রিয়া মোকাবেলার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তিনি অন্য কিছু ওষুধ খাচ্ছেন। নিজের শরীরের আগের রূপ তিনি ভুলতে পারছেন না।

কর্টিসন যদি খেতেই হয়, সেক্ষেত্রে তার ডোজে পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন গাব্রিয়েলা রিমেকাস্টেন। তার মতে, ‘কিছু সময়ের জন্য খুবই হাই ডোজ, তারপর দ্রুত মাত্র ১০ মিলিগ্রামের মতো কম ডোজের ওষুধ দিয়ে থাকি। তারপর আরও ধীর গতিতে ডোজ কমাই।’

ওষুধ খেয়ে মোটা হওয়ার প্রবণতা এতকাল ইনসুলিনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট লক্ষ্য করা যেত। ১০ বছর আগে হিল্ডেগার্ড সুয়রকাম্প-ব্র্যোনস্ট্রুপ জানতে পারেন, যে তার টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়েছে। এক বিশেষজ্ঞ তাকে দ্রুত ইনসুলিন নেবার নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরিণতি হাতেনাতে পাওয়া গেল। ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবে হিল্ডেগার্ড সুয়রকাম্প-ব্র্যোনস্ট্রুপ বলেন, ‘আমি এখন আর যাই না এবং প্রতিদিন দুপুরে কেক জাতীয় খাবার খেয়েছি। ফলে ধীরে ধীরে ওজন বেড়ে গেছে।’

ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাটিয়াস রিডেল মনে করেন, ওজন কমানোর দরজা বন্ধ করে দেয় বলে ইনসুলিন এক সমস্যা। ইনসুলিন ওজন বাড়িয়ে দেয়।

৫৮ বছর বয়সি এই নারী ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাকে আর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত মাপতে হয় না, কারণ ডায়াবেটিসের নতুন ওষুধগুলি অন্যভাবে কাজ করে। একটি ওষুধ অন্ত্রের উপর প্রভাব খাটায়। অন্যটি রক্তের মধ্যে শর্করা মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয়।

তাতে কাজও হচ্ছে। এর মধ্যে তিনি ২০ কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেছেন। মাটিয়াস রিডেল বলেন, ‘এই সব ওষুধ ডায়াবেটিসের দৌরাত্ম্য কমিয়ে অনেক কমজোরি করে দেয়। এমন ওষুধ আরও প্রয়োগ করলে শুধু রোগীদের ওজন কমে না। ইনসুলিনের জটিল চিকিৎসার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এড়ানো সম্ভব হয়। অনেক রোগী এমন ওষুধের ফলে ওজন এত কমিয়ে ফেলেন, যে শরীর থেকে ডায়াবেটিস দূর হয়ে যায়।’

হিল্ডেগার্ড এখনো ডায়াবেটিস পুরোপুরি দূর করতে পারেননি। তবে তার ক্ষেত্রে মেটাবলিজম বা বিপাক সংক্রান্ত প্রায় সব মাত্রার উন্নতি ঘটেছে। এমনকি রক্তচাপও এর মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে শুধু ওষুধে কাজ হয় না। তিনি খাদ্যাভ্যাসও বদলে ফেলেছেন। এখন তিনি অনেক কম কার্বোহাইড্রেট খান। তার বদলে তিনি বেশি শাকসবজি ও প্রোটিন খাচ্ছেন।

ঢাকা টাইমস/২৬জুন/একে