আর ‘পারছেন না’ চাঁদের কনা

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জুন ২০১৯, ১৯:৫৪ | প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০১৯, ১৮:২৭

পায়ে জোর নেই, চলেছেন হেঁটে। কঠিন জীবন, তবু মানেননি বাঁধা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ, এরপর উচ্চশিক্ষা। সবই পার করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু আর পেরে উঠছেন না। পড়ালেখা শেষ করে জীবন গড়ার জন্য দরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি।

এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে সরকারি চাকরির বয়স। সব বাঁধা পায়ে ঠেলে যিনি এতটা এগিয়েছেন, তিনি হয়ে পড়েছেন হতাশ। একটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে বুধবার তিনি বসেছেন অনশনে; জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এই দুর্দশার কথা জানবেন। আর ‘জাদুর ছোঁয়ায়’ পাল্টে যাবে জীবন।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে চাঁদের কনা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জীবন এমনিতেই কঠিন। তার ওপর বাবা আদরের চাঁদের কনার জীবনটা দুর্বিসহ করে তোলে তার প্রতিবন্ধত্ব।

মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কার্যক্ষমতা হারান চাঁদের কনা। তার বয়সী অন্য শিশুরা যখন ছুটে বেড়িয়েছে, তখন তাকে বসে দেখতে হয়েছে, মনের কোনে মেঘ রেখে হতে হয়েছে বড়।

কিন্তু এক সময় এসে পেয়ে বসে জেদ। অন্যদের চেয়ে কম না, এই বিষয়টা প্রমাণ করতে শিশু চাঁদের কনা মনোনিবেশ করে পড়াশোনায়। তার সংগ্রামটা ছিল অভাবনীয়। অন্যরা চলে পায়ে হেঁটে, আর চাঁদের কনা হাতের জোরে।

এর মধ্যে এসএসসি, এইচএসসি পাস করেন চাঁদের কনা। তার সংগ্রামের কথা জেনে প্রশংসা করে মানুষ। আগে যারা বাঁকা চোখে তাকাতো, তারাও বাধ্য হয় মুগ্ধ হতে।

সিরাজগঞ্জের মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যান রাজশাহী। ভর্তি হন মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে। সেখানে পড়াশোনা তার জন্য আরেক বিড়ম্বনার বিষয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংবেদনশীলতার অভাব তাকে ভুগিয়েছে আরো।

স্নাতকের ক্লাস হতো পঞ্চম তলায়। সেখানে কীভাবে উঠবেন চাঁদের কনা? কিন্তু তিনি যে অন্যদের মতো নন। কারো সহায়তা না নিয়ে হাতে ভর করেই সিঁড়ি ভেঙেছেন একের পর এক। আর এ জন্য তাকে কী করতে হয়েছে?

অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসতেন সাড়ে সাতটার দিকে। অথচ চাঁদের কনাকে যেতে হতো সাতটায়। কারণ? হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে তার এই বাড়তি দেড় ঘণ্টার সময় লেগে যেতো। অন্যের সহযোগিতা নেয়াটা করুণা মনে হতো।

এভাবেই স্নাতক, পরে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে পাস করেছেন স্নাতকোত্তর। স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু হলো না। যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন তিনি। এ বছরই তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। তাই শেষ বেলায় এসে বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছেন।

এখন ভরসা হিসেবে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দেখছেন চাঁদের কনা। তাই অনশনের প্লেকার্ডে সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে নানা প্লেকার্ড নিয়ে এসেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসা হুইল চেয়ার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা লেখা ২০টির মতো প্লেকার্ড। গলায় ঝুলছে, ‘আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসা চাই। তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

ঢাকা টাইমসকে চাঁদের কনা বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছি একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য। এ বছরই আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি।’

সংগ্রাম আর চাঁদের কনা, দুটি পরস্পরের সঙ্গী। যখন তিনি স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন মারা যান মা হাসনা হেনা বেগম। কয়েক বছর পর ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তার জীবনে প্রতিবন্ধত্বের সঙ্গে পরিবারে নেমে আসে আরেক দুর্যোগ। টাকা নেই, খাওয়া পড়ার নিশ্চয়তাই যায় কমে।

পড়ালেখার খরচ যোগাতে একটি বেসকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন চাঁদের কনা। এর মধ্যেই স্নাতকোত্তরে অর্জন করেন প্রথম বিভাগ। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। ভার উত্তোলন থেকে শুরু করে টিভি-রেডিওতে সংবাদ পাঠ; টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা; নাটক, গল্প ও কবিতা লেখা; অভিনয় করা ও কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলায় অর্জন করেছেন দক্ষতা। আঁকতে পারেন ছবিও।

চাঁদের কনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অনেক দয়ালু। আমি জানি না, কোথায় আমার অযোগ্যতা। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আমার কথা বলতে চাই।’

ঢাকাটাইমস/২৬জুন/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :