হারিয়ে যেতে বসেছে ২০০ বছরের দেওয়ানজী দীঘি

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০৯:২১

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর

প্রায় দু’শ বছরের পুরোনো দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানজী দীঘিটি হারিয়ে যেতে বসেছে। মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ ছাড়াও পাড়ের গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। মাছ চাষের নামে দূষণ করা হচ্ছে পানি। এতে জীব-বৈচিত্র্য বিনষ্টের পাশাপাশি বিপর্যয় নেমে এসেছে পরিবেশের। জনসাধারণের ব্যবহার্য্য এ দীঘিটি একটি প্রভাবশালী মহল গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পুকুরটি সাধারণের ব্যবহারের এবং প্রভাবশালী মহল মাটি ভরাট করে যে স্থাপনা নির্মাণ করছে, তা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এনিয়ে আদালতে মামলারও আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

এদিকে স্থানীয় মাদ্রাসা, এতিমখানা ও ঈদগাঁ মাঠ কমিটির নেতাদের নেতৃত্বে এলাকাবাসী সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানজী দীঘিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মৎস্যপোনা অবমুক্ত করেছেন।

এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসী মো. আফসার আলী সাংবাদিকদের জানান, জনগণের পুকুরে জনসাধারণ মাছ ছেড়েছে। এ মাছ বড় হলে মাদ্রাসা, এতিমখানার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী খাবে। কেউ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে যাতে না পারে এজন্য এলাকাবাসী সতর্ক রয়েছে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ফক্কাবাদ মৌজার জে.এল.নং-১৪২ এর সি.এস ৬৪৯ খতিয়ানের ২৮২৭ দাগের ৬ দশমিক ৯ একর পুকুরপাড়, ২৮২৮ দাগে ৫ দশমিক ৪১ একর পুকুর এবং ২৮২৭/৩০৯৯ দাগে ১ দশমিক ৬ একর ডাঙ্গা রয়েছে। জলভাগ এবং পাড়সহ প্রায় ১১ একর আয়তনের বিশাল আকারের দেওয়ানজী দীঘি। দিনাজপুর বিরল উপজেলার ফরককাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত এই পুকুর পাড়ের অধিকাংশ গাছ কেটে বেশকিছু জলভাগ অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করায় পরিবেশ বির্পযয়সহ পানি সংকটের আশংকা করছে এলাকাবাসী। এলাকার জহিরুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম, স্বপন চন্দ্র শীলসহ অনেকের অভিযোগ একটি প্রভাবশালী মহল তা আত্মসাতের অপচেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে পুকুর পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশকিছু দালান বাড়ি ও স্থাপনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরে নেই আগের সেই বৈচিত্র্য। বদলে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। নেই দেশি মাছ, শামুক, শাপলা-পদ্মসহ নানান প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ।

স্থানীয়  আমিরুল ইসলাম, আব্দুল গফ্ফার ও মেহেরাব আলী জানান, আগে প্রতিবছর শীতকাল এলেই নানা রং-বেরঙের নাম জানা-অজানা পাখির সমাগম ঘটতো দেওয়ানজী দীঘিতে। অতিথি পাখির বিচরণের চোখ-ধাঁধানো দৃশ্য মানুষের নজর কাড়তো। পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে এ পাখিগুলো নামতে দেখা যেত। বর্ণিল সব অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রকৃতি ও পরিবেশ। একটি প্রভাবশালী মহলের করাল গ্রাসে এখন সব হারিয়ে গেছে-এলাকাবাসীর এমনটাই অভিযোগ।

স্থানীয় জনসাধারণ তা মানলেও বিট্রিশ আমলে জনসাধানণের জন্য ব্যবহার্য্য উল্লেখ করা নিস্কর বিশাল আকারের এই দেওয়ানজী দীঘি এখন ব্যক্তি মালিকানার দাবি ওঠেছে। এলাকাবাসী এবং ব্যক্তি মালিকানা দাবিদাররা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। পুকুরে পাল্টাপাল্টি মাছের পোনা অবমুক্ত এবং মাছ ধরারও প্রতিযোগিতা চলছে। জনসাধারণ মাছ ধরার উৎসবও করেছে। এনিয়ে বিস্তর অভিযোগ মালিকানা দাবিদারদের।

পুকুরের মালিকানা দাবিদার মো. আখতার আলম এবং মো. ফারুক হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, ওই জমির মালিক তাদের বাবা তমিজ উদ্দিন আহাম্মদ। জমিদার রায়তী স্বত্বে তার বাবার নামে ওই জমি পত্তন দেয়া হয়েছে। তারাই ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। তবে, তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মালিকানাধীনের স্বপক্ষে দলিলাদি দেখাতে পারেননি।  পুকুরটি সাধারণের ব্যবহার্যের এবং প্রভাবশালী মহল মাটি  ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ ছাড়াও পুকুরের পানি দূষণ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম রওশন কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সি.এস রেকর্ডে ওই জমি জনসাধরণের ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়েছে। পবরর্তী রেকর্ডে জনসাধরণের ব্যবহারের কথা উল্লেখের জন্য আমরা ভূমি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

জীব-বৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানজী দীঘি দূষণ ও দখলমুক্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের যেমন দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন জনসচেতনার, এমনটাই তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/জেবি)