ছাত্রদলে আজগুবি কাণ্ড

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ১১:২৪ | আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯, ১১:৫৩

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

রেজাউল করিম টুটুল। রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। বিয়ে করেছেন এক যুগ আগে। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় ছাত্রদলের কাউন্সিলে তিনি একজন ভোটার।

টুটুলের মতো ৫৭৫ জন কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে এই দুই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না টুটুল। কারণ, প্রার্থী হতে হলে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। শুধু টুটুল নয়, তার সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকও বিবাহিত।

ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলের বেশিরভাগ অংশ বিবাহিত। অনেকের একাধিক বাচ্চাও আছে। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২০০০ সালে এসএসসির যে শর্ত দেয়া হয়েছে অধিকাংশ কাউন্সিলর সেই বয়স পার করেছেন বহু আগে।

বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, ছাত্রদলের কাউন্সিলর হিসেবে যারা আসছেন, তাদের কেউ কেউ বিএনপিরও নেতা।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকও। চট্টগ্রামের আরও কয়েকজন নেতা আছেন যারা ভোট দেবেন ছাত্রদলের কাউন্সিলে। ছাত্রদলের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলেরও পদে আছেন একাধিক জন।

এদের মধ্যে মাঈন উদ্দীন মো. শহীদ যিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, বেলায়েত হোসেন বুলু যিনি চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। এইচ এম রাশেদ খান যিনি চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, মোশাররফ হোসেন যিনি চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। এসব সংগঠনের কমিটির তালিকায় এদের সবার নাম পাওয়া গেছে।

এমন নানা অসঙ্গতি রেখেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে সহযোগী সংগঠনটি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ছাত্রদলের একটি অংশ শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে। তারা আগের মতই নিয়মিত কমিটি করার দাবি করছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য করা সার্চ কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ২০০০ সালকে এসএসসির ব্যাচ ধরে ভোটার তালিকা করেছি। এখানে অনেকে অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনে চলে গেছে। তারা হয়তো পদত্যাগ করেনি। যে কারণে কাউন্সিলর হিসেবে তাদের নাম আছে।’

বিবাহিতদের ছাত্রদল করার বিষয়ে এক প্রশ্নে দুদু বলেন, ‘অনেকে বিয়ে করেছে, এটা ঠিক। আমরা বলে দিয়েছি, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বিবাহিতরা হতে পারবে না। আর সবাই প্রার্থীও হবে না। তাই এখান থেকে অনেকে ঝরে যাবে। আমরা চাইছি ধীরে ধীরে হলেও ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলকে তুলে দেব।’

আগামী ১৫ জুলাইয়ের সম্মেলনের জন্য ছাত্রদলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে পাঁচজন করে কাউন্সিলর নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলোর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা ভোটার হতে পেরেছেন। কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে বলে বিএনপি জানিয়েছে। তালিকায় থাকা ৫৭৫ জনই সেই ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ৭ দফা আচরণবিধিও প্রণয়নও করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এতে বলা হয়েছে, প্রার্থীরা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, কোনো প্যানেল করা যাবে না। পোস্টার, ব্যানার ও গণমাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে না। সভা-সমাবেশ, আপ্যায়ন ও কোনো ধরনের উপহার সামগ্রী দেওয়া যাবে না। গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়া কিংবা সংবাদ সম্মেলন ও টকশোতেও প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবে না।

ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে সেই শর্তও আছে।

সর্বশেষ ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে। ওই কমিটি বিএনপি থেকে দেওয়া হয়েছিল। গত ৩ জুন বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়।

এরপর নতুন কমিটি গঠনে বয়সসীমার একটি শর্ত যুক্ত করে দেয়। তাতে বলা হয়, ২০০০ সালের আগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কেউ নেতা হতে পারবে না। এই বয়সসীমা তুলে নিয়ে নিয়মিত কমিটির দাবিতে আন্দোলনে থাকা ১২ নেতাকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের কাউন্সিলদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের চারটি ইউনিটসহ বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত। এদের কারো কারো বাচ্চাও আছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ও সাধারণ সম্পাদক মো. আসিফুর রহমান বিপ্লব বিবাহিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আল মেহেদী তালুকদারের সন্তানও আছে বলে ছাত্রদলে আলোচনা চলছে।

ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি খন্দকার এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এম এ গফ্ফার, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন রুবেল, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি কামরুজ্জামান জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত রাব্বি আরাফাত, ঢাকা কলেজের সভাপতি কাজী মাসুদ করিম, সরকারি তিতুমীর কলেজ সভাপতি তসলিম আহসান মাসুম, সরকারি কবি নজরুল কলেজ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন রিন্টু, গাজীপুর জেলা সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়াও বিবাহিত বলে তথ্য আছে।

রাজশাহী জেলায় পাঁচজন কাউন্সিলের মধ্যে সভাপতি ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল সরকার ডিকো বিবাহিত। এরা দুজনই দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন। মহানগর সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি বিয়ে করেছেন আট বছর আগে।

ফরিদপুর জেলা ও মহানগরের ১০ জন কাউন্সিলের মধ্যে বেশিরভাগই বিবাহিত। রাজবাড়ী জেলা সভাপতি আরিফুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ পাভেলও বিবাহিত।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে চট্টগ্রাম থেকে কাউন্সিলর হিসেবে খসড়া ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ১৮ জনের। এরা চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ, উত্তর, বিশ্ববিদ্যালয় চার ইউনিটে ১৮ জন নেতার নাম রয়েছে। তবে এদের মধ্যে সিরাজ উল্লাহ ছাড়াও বেশ কয়েকজন আছেন যারা অন্য সংগঠনের নেতা।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/ডব্লিউবি/জেবি)