সেদিন সংসদে ৭-৮ মিনিট ব্ল্যাঙ্ক ছিলাম: অর্থমন্ত্রী
গত ১৩ জুন প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার কথা ছিল অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামালের। তবে অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো বাজেট বক্তৃতা পড়তে পারেননি। যতটা পড়েছেন সেখানেও বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি।
শনিবার জাতীয় সংসদে বক্তব্যে মন্ত্রী জানান, খুব শ্লথ গতিতে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠছেন। সেদিনের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন (১৩ জুন) অধিবেশন শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী সাত থেকে আট মিনিট আমি সম্পূর্ণভাব ব্ল্যাঙ্ক ছিলাম। সেই সময়টির কথা আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দিনটি ছিল আমার জীবনের চরম কষ্টের দিন। কারণ এর তিন দিন আগে অর্থাৎ ১০ জুন ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং হাসপাতালে ভর্তি হই। এই অসুস্থতা নিয়েই আমি গত ১৩ তারিখে সংসদে আসি। আমার বিশ্বাস ছিল- প্রস্তাবিত বাজেটটি উত্থাপন করতে পারব। কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না। আমি কোনো রকমে গিয়ে আমার আসনে বসলাম। তখন আমার কেবল মনে হচ্ছিল প্রবল এক ভূমিকম্প পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে। আর সেই ভূমিকম্পের কারণেই যেন ক্ষণে ক্ষণে আমার কম্পন হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমি সিট থেকে পড়ে যাচ্ছি। আমি তখন মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলাম। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ সৃষ্টির জন্য। আমি ভাবতে শুরু করলাম আমার আশপাশের বন্ধুবান্ধব কেউ না কেউ ধরবেন, যেন আমি ছিটকে না পড়ে আহত না হই। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আমার বন্ধু-বান্ধব সব ছুটে এলেন।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে আমি স্বাভাবিক হই। মনে হলো আমার আর সমস্যা হবে না। আমি তখনই ২৫ থকে ৩০ মিনিটের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু অংশ পড়লাম। তখন আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দিল। সেই সমস্যাটি হলো আমার হাতে কোনো শক্তি নেই। আঙ্গুলে কোনো শক্তি নেই। বাজেটের পাতাগুলো উল্টাতে পারছিলাম না। তখন সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী এগিয়ে এলেন। তিনি আমার বাজেটের প্রতিটি পাতা উল্টে দিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটাও রইল না। একটু পরই আমি চোখে কিছু দেখি না। তখন আর সময় না নিয়ে আমি স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও অসুস্থ ছিলেন। তারপরও আন্তরিকভাবে ও সুন্দরভাবে বাজেটটি পড়লেন।’
প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৩ তারিখ থেকে অসুস্থতার কারণে আমার আদৌ বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এমনকি সংসদেও আসতে পারিনি। আমি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নই। আস্তে আস্তে সুস্থ হচ্ছি। যদিও গতি অনেক শ্লথ। তবে সংসদে আমি না থাকলেও আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংসদে থেকে এমপিদের কথা নোট নিয়েছেন ও প্রতিদিন আমাকে অবহিত করেছেন।’
(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/জেআর/জেবি)