নুসরাত হত্যা
ওসি মোয়াজ্জেমের মামলায় চার্জ শুনানির সময় মঞ্জুর
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানিসংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের মামলায় চার্জ শুনানির জন্য আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল।
আজ রবিবার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন এ তারিখ ঠিক করেন।
এদিন মামলার চার্জগঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এ লক্ষ্যে সকাল ১০টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালতে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। বেলা দুইটার দিকে শুনানির সময় নির্ধারণ থাকায় তাকে ওই সময় পর্যন্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুইটা পাঁচ মিনিটে তাকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও সাবেক প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ ট্রাইব্যুনালে আসামির সঙ্গে মামলাসংক্রান্তে সাক্ষাতের সময় চাওয়া এবং নুসরাতের সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেমের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিওর কপি পেতে আবেদন করেন।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদসংক্রান্ত তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের যে সার্টিফাইড কপি তারা পেয়েছেন তা সুস্পষ্ট নয়। তাছাড়া মামলা মূলত ওই ভিডিওর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই ওই ভিডিও পর্যবেক্ষণ না করে তারা মামলার চার্জ শুনানিও করতে পারবেন না। এ ছাড়া মামলাসংক্রান্ত শুনানির প্রস্তুতির জন্য আসামির সঙ্গে তাদের কথা বলা দরকার বলে আদালতকে জানান তারা।
ওই সময় আসামির সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে বিচারক বলেন, তারা জেলে গিয়ে তাদের ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘আলামত ভিডিওর কপি দেয়ার বিষয়ে আইনে কোনো বক্তব্য নেই। তারা দেখাতে চাইলে আমরা আদালতেই দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারি।’
বিচারক বলেন, ‘এ আইন ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করবে। তাই ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তারা কপি চাইলে দিতে হবে।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ভিডিওর কপি পাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং ওসি মোয়াজ্জেমের সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষাতের আবেদন নাকচ করেন।
একই সঙ্গে চার্জগঠনের শুনানি এবং ওসি মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতির আবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১০ জুলাই সময় মঞ্জুর করেন।
গত ১৬ জুন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার হন। ১৭ জুন তাকে এই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এরপর গত ২৪ জুন এক আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেওয়ার আদেশ দেন। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কারাবিধি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ভোগ করছেন ওসি মোয়াজ্জেম।
এরও আগে গত ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এ মামলায় দাখিলকতৃ তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই দিনই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে নেয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফিকে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন চাপ প্রয়োগ করলে সে অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় নুসরাত।
(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/মোআ)