শাহীন, এ রক্ত সইতে পারছি না!

মনদীপ ঘরাই
 | প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৩

রিফাতের মৃত্যু নিয়ে কলম ধরার পর কেমন জানি থমকে গেছিলাম। রক্ত, দা, সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কতই না আলোচনা হচ্ছে। মৃত্যু আর হত্যা ছাপিয়ে দোষের কাঁটাটা কার ওপর চাপবে তাই নিয়ে সরব সবাই।

রিফাতের মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছে। আহারে! যদি ছেলেটা অন্তত বেঁচে থাকতো দায়ের আঘাতগুলো সহ্য করে!

মনে হয়েছে, বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় কিছু। রাতারাতি পাল্টেছে সে ধারণা। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, সব হারানো শাহীন হিসেব করে দিয়েছে এলোমেলো।

চৌদ্দ বছর বয়স্ক শাহীনকে যখন পেটের দায়ে ভ্যান চালাতে হয়, তখন সে লজ্জাটা মাথাটা নিচু করে দিতে বাধ্য আমার-আপনার, সবার। কিন্তু, আমরা এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, শিশুশ্রম আমাদের নজরই কাড়ে না। কলমের আঁচড়ের বিষয় হয়ে উঠতে পারে না। লজ্জা পাবারই বা কী আছে।

থাক। লজ্জা পেতে হবে না। আর একটু গভীরে যাই। এই শাহীনের কাছ থেকে যখন তার একমাত্র সম্বল ভ্যান কেড়ে নেয়া হয়, সে লজ্জা তো পাবেন? এবারও আপনার তেমন একটা কষ্ট হচ্ছে না, বলুন? ভেবে নিয়েছেন, কেউ না কেউ ঠিকই কিনে দেবে। আমার লজ্জা পাবার কী আছে!

ধরে নিলাম নেই। এই যে ভ্যানটা কেড়ে নিতে গিয়ে দুস্কৃতিকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত হলো শাহীন, এ লজ্জাও কি আমরা পাবো না? এবার নিশ্চয়ই একটু একটু লজ্জা হচ্ছে। আমার হচ্ছে না। গর্ব হচ্ছে। শাহীনের রক্ত খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশার ‘গর্ব’ আর বিবেকহীন চোরদের দীনতাকেই সামনে এনেছে।

ওদেরকে ধন্যবাদ। শাহীনকে এত ছোট বয়সে জীবনের চূড়ান্ত শিক্ষাটা দিয়ে গেছে। এই শাহীন আর যাই পারুক, জীবনে মানুষকে বিশ্বাস করার সাহস দেখাতে পারবে না।

শাহীনের রক্ত কিন্তু আমাদের মতো গরম রক্ত নয়। সে রক্ত ফেসবুকে হম্বিতম্বি করে টগবগিয়ে ফুঁটতে জানে না। শাহীনের রক্তটা শীতল। শরীরে শান্তভাবে বয়ে চলে সংগ্রাম করতে জানে। ওর ওই রক্তে মিশে আছে সব হারানোর চোখের জল।

বাংলানিউজের উত্তম ঘোষ দাদার অনুরোধে কলম ধরেছি। তাকে বলতে চাই, লিখে থেমে যেতে মানুষ হিসেবে জন্মাইনি। আমার একদিনের বেতন শাহীনের কাছে পৌঁছে দিতে চাই আপনার মাধ্যমে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখার সাহসটাই যে হবে না!

লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :