ডিআইজি মিজানের একের পর এক কেলেঙ্কারি

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৬ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯, ২০:৪১

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। বাসনা ছিল আরো বড় পদে যাওয়ার। তবে এর মধ্যে একের পর এক কেলেঙ্কারিতে এই পদের পাশাপাশি পুলিশের চাকরি থেকেও বরখাস্ত হয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। নানা কায়দা কসরত করেও এড়াতে পারলেন না গ্রেপ্তার।

মিজানের বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয় ২০১৭ সালের একেবারে শেষের দিকে। ভুয়া কাবিননামা তৈরির অভিযোগে একজন নারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বের হয় কেঁচো খুড়তে সাপ। বেরিয়ে আসে, ওই নারীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছেন তিনি। যে সাংবাদিক এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাকেও।

একের পর এক অভিযোগ আসলেও ডিআইজিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে সদরদপ্তরে সংযুক্ত করে রেখে দেওয়া হয় এক বছরেরও বেশি সময়। তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো আইনি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল তিনি পার পেয়ে গেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দুদকের তদন্তকে পক্ষে নিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা বলে ফেঁসেছেন তিনি। হয়েছেন বরখাস্ত, মামলা হয়েছে দুর্নীতির। আর সেই মামলায় আগাম জামিন নিতে গিয়ে আদালতের নির্দেশে নিজ বাহিনীর হাতে হলেন আটক।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিজের স্ত্রী থাকার পরও এক নারীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে করে বিয়ে করার অভিযোগ উঠে ডিআইজির বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ওই বছরের শেষ দিতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে সরিয়ে সদরদপ্তরে নেয়া হয়।

এই ঘটনাটির তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদরদপ্তর। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে সে প্রতিবেদন জমা পড়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এরপর ব্যবস্থা থাকে আটকে।

এই কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ফাঁস হয় হত্যার হুমকির অভিযোগ। বেসরকারি টেলিভিশনের এক উপস্থাপিকা ও তার স্বামীকে খুন করে ৬৪ টুকরো করে জেলায় জেলায় তা ফেলে রাখার হুমকি দেওয়া হয়েছিল ওই কথোপকথনে।

হুমকিদাতা ডিআইজি মিজান- এমন অভিযোগ এনে ওই নারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর ওই নারীর নামে ফেসবুকে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে তার আপত্তিকর ছবি ছড়ানো হয়। এর পেছনেও ডিআইজি মিজানের হাত আছে মর্মে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়ে। আবার হয় তদন্ত।

দুটি অভিযোগেরই প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ডিআইজি কমিটির কাছে নিজেরে বাঁচাতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন যে মেয়েটি তার আবেগের সুযোগ নিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে উত্তেজিত করেছেন। ফলে তিনি নিজে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে কিছু ‘অপ্রত্যাশিত’ শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। তবে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান।

এ গেল নারী কেলেঙ্কারির কথা। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পুরনো। নানা জায়গা থেকে তথ্য পাওয়ার পর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।

গত বছরের ৩ দুর্নীতির অভিযোগে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিজানকে। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলে। এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে।

আর এই সময় ডিআইজি নিজেই তার এক কেলেঙ্কারি ফাঁস করেন। বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। আর এটা যে তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে আনতে হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই আর ছিল না। এই অভিযোগ উঠার পর পর দুদক তার পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে বরখাস্ত করে।

ঘুষ দেওয়াও আইন বিরুদ্ধ কাজ হলেও ডিআইজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কালক্ষেপণ হতেই থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত গত ২৪ জুন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে পুলিশ থেকে বরখাস্তের চিঠিতে সই করেন। পরদিন তাকে বরখাস্ত করে জারি হয় প্রজ্ঞাপন।

আগের দিন ডিআইজি মিজান ছাড়াও তার প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করে দুদক। এতে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলাতেই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিতে গিয়ে ধরা খান ডিআইজি মিজান।

ঢাকাটাইমস/০১জুলাই/এএ/ডব্লিউবি