জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে ডিআইজি মিজান

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০১৯, ১২:৩১ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯, ১৮:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও গোপন এবং মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় পুলিশের বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়।

আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী মামলা পরিচালনা করেন। এ আইনজীবী প্রথমে আসামির কাছ থেকে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেয়ার অনুমতি গ্রহণ করেন।

এরপর ডিআইজি মিজান তাতে স্বাক্ষর করলে আইনজীবী সমাজী বলেন, ‘আমরা একটি জামিনের আবেদন দিয়েছি। তবে এখানে দেখতে হবে এ আদালতে জামিনের আবেদন শোনার এখতিয়ার আছে কি না।’

তখন দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আগে এ ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ছিল। কিন্তু গত ২০ জুন দুদক বিধি সংশোধন করে এ আদালতকে জামিন রিমান্ডসহ সব ধরনের শুনানির গ্রহণের এখতিয়ার দিয়েছে।’ তখন আইনজীবী সমাজী বলেন, ‘সেখানে জামিন শুনানির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে আদালত যদি মনে করেন শুনবেন তবে আমরা শুনানি করতে পারি।’

এরপর আইনজীবী সমাজী জামিনে আবেদনে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে দুদক যে মামলায় জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও গোপনের যে অভিযোগ করেছে তার সমর্থনে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে কোনো ডকুমেন্ট দাখিল করতে পারেনি। এছাড়া কী প্রক্রিয়ায় আসামি অর্থ মানিলন্ডারিং করেছে তাও বলা নেই। আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা দুদক আইন অনুযায়ী জামিন অযোগ্য হলেও তা ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আসামি ওই আইনের ৪৯৭ ধারার বিধান অনুযায়ী জামিন পাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। এছাড়া আসামি অসুস্থ, তিনি উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা। চাকরিজীবনে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রীয় অনেক পদকও পেয়েছেন, জঙ্গি দমনে কাজ করেছেন। সে বিবেচনায়ও তিনি জামিন পেতে পারেন।’

এরপর দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর কাজল মামলার এজাহারের অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘মামলার  এজহারেই অভিযোগ সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। তিনি (আসামি মিজান) চাকরিজীবনে কত টাকা আয় করতে পারেন সে হিসাব যেমন দেয়া আছে তেমনি কত টাকা অবৈধভাবে অর্জন করে ওই টাকায় নিজের, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে কী কী সম্পদ করেছেন তার বর্ণনাও আছে। আর জামিনের ক্ষেত্রে এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা প্রয়োগ হবে না। এখানে প্রয়োগ হবে ক্রিমিনাল ল’ এমেইমেন্ট আইন। তাই জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আসামি মহামান্য হাইকোর্টে জামিন চেয়েছিলেন। হাইকোর্টই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। এখানে এ বিষয়টিও দেখতে হবে।’

ওই সময় ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর, মীর আহমেদ আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।   

 
উভয়পক্ষের এক ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে বিচারক দুপুর সাড়ে ১২টায় বলেন, ‘হাতে সময় কম তাই বিস্তারিত আদেশ আদালতে দিতে পারলাম না। আপনারা পরে দেখে নেবেন। আসামি কারাগারে যাবে।’

এর আগে গত ২৪ জুন এ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মর্শেদ মামলা করেন। মামলায় মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা, ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকেও আসামি করা হয়।

মামলার পর আত্মগোপনে থাকা এ কর্মকর্তা গত রবিবার হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। যার ওপর গত সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন।

জোর করে এক নারীকে বিয়ে করে তা গোপন রাখতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকির মতো ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় তার অবৈধ সম্পদের সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে দুদক। সম্প্রতি তার সম্পদের তদন্তের কর্মকর্তার ঘুষ দিয়েছেন অভিযোগ তুলে নতুন করে বিতর্কে আসেন এই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
মামলায় তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। মামলার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ জুন ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করে।

(ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/আরজেড/জেবি)