বহুল প্রচলিত কিছু ওষুধের দাম বাড়ল

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:৪০

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

গ্যাসট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ (প্রেশার)- এমন কিছু রোগের বহুল প্রচলিত ওষুধের দাম বেড়েছে বাজারে। বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০ শতাংশ। যে ওষুধের দাম আগে ছিল পাঁচ টাকা এখন তা কিনতে হচ্ছে সাত টাকায়। রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ, পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্যের সত্যতা মেলে।

সপ্তাহ তিনেক আগেও গ্যাস্ট্রিকের এক পাতা ওষুধের দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন তার তার দাম বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। হঠাৎ করে এসব ওষুধের দাম বাড়ার  সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি ফার্মেসির লোকজন।

তবে ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে দেশে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।

কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেও দাম বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সব ধরনের ওষুধ নয়, ওষুধ প্রস্তুতকারক কয়েকটি কোম্পানি তাদের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের দাম বাড়িয়েছে।

খিলগাঁও, সবুজবাগ ও পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকার কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে জানা গেছে, মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া ওষুধগুলোর বেশিরভাগই উচ্চ ওক্তচাপ ও গ্যাস্ট্রিকের। এর মধ্যে আছে অ্যাসিফিক্স ২০ এমজি, বাইজোরান ৩/২০ ও ৩/৪০, ওলমেজান ২০ এমজি ও ৪০ এমজি, ফিনিক্স ২০ এমজি এবং ম্যাক্সপ্রো। প্রতিটি ওষুধের দাম পিসপ্রতি দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা বেড়েছে।

গোড়ানের ইশা ফার্মেসির বিক্রেতা লিটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ফিনিক্স প্রতিটি ট্যাবলেট আগে পাঁচ টাকায় বিক্রি হতো। সপ্তাহখানেক আগে আমাদের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এই ওষুধ সাত টাকা করা হয়েছে। অ্যাসিফিক্স ছিল ৫০ টাকা পাতা (১০ পিস), এখন ৭০ টাকা।’

প্রেশারের ওষুধ বায়জোরান ৫/২০ প্রতিটির দাম ছিল ১০ টাকা, বর্তমানে ১২ টাকা। ৫/৪০ ছিল ১৫ টাকা, এখন তিন টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা। রেডি প্লাজল ২০ এমজি ছিল পাঁচ টাকা, এখন তার দাম সাত টাকা, মোনাস ১০ এমজির আগে দাম ছিল ১৫০ টাকা পাতা, এখন বেড়ে তার দাম হয়েছে ১৬০ টাকা। ডমপিরিডন আগে ছিল আড়াই টাকা প্রতিটি, এখন দাম বেড়ে হয়েছে তিন টাকা।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার একটি ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিক ও প্রেশারের ওষুধের দাম কিছুটা বেড়েছে। এই দাম বাজেটের এক সপ্তাহ আগেই বেড়েছে। বাজেটের পরে সব সময়ই ওষুধের দাম বেড়ে যায়। কোম্পানি বাড়ালে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।’

এসকেএফের কোম্পানির প্রতিনিধি আসাদুর রহমান ঢাকা টাইসকে বলেন, ‘কোম্পানির ধার্য করা দামে আমরা ফার্মেসিতে ওষুধ বিপণন করি। বাড়া-কমার বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।’

অপসনিন ফার্মার এক্সিকিউটিভ শরিফুল ইসলাম জানান, অন্যান্য কোম্পানি দাম বাড়ানোয় তাদের কোম্পানিও দাম বাড়িয়েছে। ওষুধের দাম বাড়ানো নিয়ে কিছু জানে না বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি। এর  মহাসচিব শফিউজ্জামান বলেন, ‘আমার জানামতে চীনে প্রায় ১০০ কারখানা বন্ধ। পরিবেশ রক্ষায় দেশটির সরকার সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ কারণে ওষুধের দাম বাড়তে পারে। আমার জানামতে নতুন ডিজি এসেছেন এক মাস হয়েছে। উনি কোনো ওষুধের দাম বাড়াননি। আগের ডিজি বাড়িয়েছেন কি না তা আমার জানা নেই।’

রেনেটা কোম্পানির রিপ্রেজেনটিটিভ জাকির হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে ওষুধের দাম বেড়েছে।

ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের এখতিয়ার সীমিত বলে জানান ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘১৯৯৪ সালের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ১১৭টি ওষুধে দামের বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। এর বাইরে অন্য কোনো ওষুধের দামের বিষয়ে আমাদের এখতিয়ার নেই। ওই ওষুধগুলোর মূল্য কোম্পানিগুলো নির্ধারণ করে। তারপরও আমরা ওষুধ কোম্পানিগুলোকে দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে বলি। অতিরিক্ত দাম যেন তারা না রাখে সে বিষয়ে পরামর্শ দেই।’

ঢাকাটাইমস/৩জুলাই/এএ/এমআর