২৮ দিনে কুপিয়ে হত্যা অন্তত ২৮

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০১৯, ১২:৪৪

প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ‘কুপিয়ে হত্যা’ করার খবর আসছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কুপিয়ে প্রাণহানির খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন। গত বুধবার বরগুনায় ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সব মহলের নজরে পড়েছে। তবে একই অসহায়ত্বে মৃত্যু ঘটছে আরও অনেকের।

ঢাকা টাইমসের হিসাবে গত ২৮ দিনে সারাদেশে অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এসব মৃত্যুর সবকটিই কুপিয়ে হত্যা। এরমধ্যে রাজধানী ও তার আশেপাশেই ঘটেছে অন্তত চারটি ঘটনা। বরগুনায় রিফাত হত্যাকাণ্ডের দিনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে আরও দুজনকে।

কুপিয়ে হত্যার এমন নৃশংসতার শিকারদের মধ্যে অন্তত আট জন নারী। আর নিহতদের মধ্যে ১২ বছরের কিশোর যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ৯০ বছরের বৃদ্ধাও। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন, রয়েছেন জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক কর্মীও। এই এক মাসে অন্তত তিন জন স্ত্রী খুন হয়েছেন তাদের স্বামীর নৃশংসতায়। আর অন্তত দুই জন ইউপি সদস্য এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন।

সবশেষ ২ জুলাই (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীতে স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করেছেন এক স্বামী। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রায়েরবাজার এলাকায় সোমবার (১ জুলাই) দিবাগত রাত ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত শারমিন আক্তারের (১৯) অভিযুক্ত স্বামী খোকন পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। তবে ওই ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে পারিবারিক কলহের জের ধরে খোকন তার স্ত্রী শারমিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

এর দুই দিন আগে গত রবিবার রাজধানীর কেরানীগঞ্জে এক অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মো. রনি (২৫) নামের ওই অটোরিকশা চালককে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া চৌরাস্তার শমসেরপুল এলাকায় হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই এলাকা থেকে তিন যুবককে আটক করেছে। রনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চুনকুটিয়া কাঁচা সড়ক এলাকার হারুন হাওলাদারের ছেলে।

একই দিনে রাজশাহীতে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছ। পুঠিয়া উপজেলার লেপপাড়া গ্রামে কারিমা খাতুন (৪০) নামে ওই নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের স্বামীর নাম শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ আবুল কাশেম (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। কারিমা খাতুনকে ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

২৯ জুন রাজধানীর হাজারীবাগে ইয়াসিন নামে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, রায়েরবাজার এলাকায় রাতে ১৫-১৬ জন দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে গুরুতর আহত হয় কিশোর ইয়াসিন। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইয়াসিন চায়ের দোকানদার ছিল। হত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। পুলিশ বলেছে এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চলেছে।

একইদিন দিবাগত গভীর রাতে বাগেরহাটের রামপালে এক ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার ভাগা গ্রামে নিজ বাড়িতে ভ্যানচালক লাহু শেখকে (৩৫) কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে ৩০ জুন বেলা ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। লাহু শেখও খুন হন তার নিজের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় তার ওপর চালানো হামলায়।

২৮ জুন রাতে কুষ্টিয়ায় সাবিনা ইয়াসমিন (৪০) নামে ওই গৃহবধুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জেলার খোকসা উপজেলার হেলালপুর গ্রামে তিনি নিজ বাড়িতে খুন হন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মৃতের সাবেক স্বামী বাদশা আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ২৬ জুন কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি ঘটে রৌদ্রজ্জ্বল সকালে একটি কলেজ এলকায়। বরগুনা জেলা সদরে শত শত মানুষের সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এসময় তার স্ত্রী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে রক্ষা করতে প্রাণপন চেষ্টা করেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় কোনো মানুষ রিফাতকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হলে সেখান থেকে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যার সূত্র ধরে পরে হত্যাকা-ের মূল হোতাদের চিহ্নিত করা হয়। গত মঙ্গলবার ঘটনার মূল হোতা নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

কুপিয়ে হত্যার এই ঘটনা নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক তখন কই দিন সকালে ঘটে আরও একই হত্যাকা-। সেটি রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। সেখানে এক নারী ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত বিউটি আক্তার কুট্টি কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন।

উপজেলার পশ্চিমগাঁও এলাকায় এ হত্যাকা- ঘটে। প্রতিদিনের মতো সকালে চঁনপাড়া থেকে পশ্চিমগাঁও এলাকার দিকে হাঁটতে বের হন এই নারী ইউপি সদস্য। এসময় পশ্চিমগাঁও এলাকায় পৌছালে একদল দুর্বৃত্ত তাকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

আর ওই দিন দিবাগত রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক মা ও তার ছেলেকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বত্তরা। উপজেলার দুর্গানগর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আমজাদ হোসেন মুকুল (৫৫) ও তার মা রিজিয়া খাতুন (৯৩) এ হত্যাকা-ের শিকার হন। পুলিশ জানায় রাতে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে মা ও ছেলেকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা তাদের ঘরের দরজা খোলা দেখে ভেতরে গিয়ে মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়।

এর আগে কুপিয়ে হত্যার যে খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সেটি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘটনা। উপজেলার নশাসন সরদারকান্দি গ্রামে ইমরান হোসেন সরদার (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ২২ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চেয়ারম্যানের বাড়ি ডগরি বাজারে গাড়ি (প্রাইভেটকার) রেখে অটোরিকশা করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন ইমরান। পথে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের নশাসন মাঝিকান্দি বড় কবরস্থানের কাছে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে এলাপাথারি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।পরে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এর আগের দিন ২১ জুন রাজশাহীর মোহনপুরে আসমা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যার খবর আসে। উপজেলার একটি মাঠ থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয় পদ্ম বিলের পাশ মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারের সময় মরদেহের পা, মাথা ও মুখে জখম পায় পুলিশ।

২০ জুন দিবাগত রাতে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। এবার হত্যার শিকার হন অমর তাঁতী (৫৫) নামে এক চা বাগানের পাহারাদার। অমর তাঁতী গিলানী চা বাগানে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ জানায়, রাতের খাবার শেষে বাড়ি থেকে বের হলেও কর্মস্থলে না যাওয়ায় রাত ১টার দিকে তাকে খুঁজতে বের হন সহকর্মীরা। একপর্যায়ে বাগানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহটি দেখতে পাওয়া যায়।

আর ১৯ জুন মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নির্বাচনে জয় পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী এরশাদ মুন্সী নিহত হন বলে খবর প্রকাশিত হয়। ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের সীতানাথ সড়ক এলাকায় তাকে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে কয়েকজন যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এরশাদ মুন্সীকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই দিনে কুষ্টিয়ার দামুড়হুদায় শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে ঘরের ছাদের সঙ্গে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে। ঘটনার পর রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

১৭ জুন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আমির উদ্দিন (৮০) নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করে লোকমান হোসেন তুরা (৫০) নামের এক মাদকসেবী। মদক সেবনে নিষেধ করায় এ ঘটনা ঘটে বলে খবরে প্রকাশ। উপজেলার শশরা উত্তরপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা ঘাতক লোকমানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

একই দিনে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মো. আরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাতে উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের আটকাহনিয়া গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর একদিন আগে গত ১৬ জুন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে ফখরুল হাওলাদার (৪৫) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে উপজেলার চরহোগলা গ্রামে নিজ বাড়ির অদূরে তাকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বরিশাল শেরোবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ ছাড়া ১৫ জুন কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে দুটি। ওই দিন যশোরের চৌগাছায় পুকুর ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বে মমিনুর রহমান (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে তার আপন খালাতো ভাইরা। উপজেলার লস্কারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

একই দিনে নাটোরের সিংড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কিশোর বয়সী (১২) সৎ ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে বড় ভাই এসাহাক। ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে উপজেলার পুটিমারী গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরের নাম হেদায়েত।

তার দুই দিন আগে ১৩ জুন নাটোরের গুরুদাসপুরে মো. জালাল উদ্দিন (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হাত-পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে খুন করে দুর্বৃত্তরা। মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। গুরুদাসপুর উপজেলার সাবগাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

১২ জুন কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। ওইদিন রাত ১০টার দিকে উপজেলার মিয়াজী ঘাট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক নুরুল আলম (৩০)কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এই দিনেও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে দুটি। অপর ঘটনাটি ঘটে মৌলবীবাজারের শায়েস্তাগঞ্জে। সেখানে স্ত্রী মুক্তিরাণী দাসকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। তারা উপজেলার পূর্ব বড়চর গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় মুক্তিরাণীর।

১১ জুনেও ঘটে দুটি ঘটনা। এই দিন রাজধানীর অদূরে সাভারে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে এক স্বামী। সাভারের বিরুলিয়ার আকরাইন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম নাজমা আক্তার (৩৩)। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার পুটিজানা গ্রামে। এই ঘটনায় ঘাতক স্বামী সুরুজ্জামান বকুলকে (৪৮) গ্রেফতার করে পুলিশ।

একই দিনে নড়াইল হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের নৈশপ্রহরী মান্নান শেখকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিন রাত পৌনে ১২টার দিকে নড়াইল-ফুলতলা সড়কের মাছিমদিয়াস্থ ফিলিং স্টেশনের কাছে এ হত্যাকা- ঘটে।

১০ জুন একই ধরনের তিনটি হত্যাকা- ঘটে। এদিন পাবনার বেড়ায় প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে এক যুবক নিহত হন। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে উপজেলায় হক আলী শেখ (২৮) নামে ওই যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় ১১ জুন দুপুরে পুলিশ আসলাম (৪৫) নামে একজনকে আটক করে।

দিনের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়। সেখানে গৃহবধূ পারভীন আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে স্বামীর বিরুদ্ধে। ১০ জুন দিবাগত রাতে চরকাজল ইউনিয়নের বড়শিবা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় স্বামী শিরু আলম খাঁকে আটক করে পুলিশ।

১০ জুন কুপিয়ে হত্যার তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে শরিয়তপুরের নড়িয়ায়। পূর্ব শত্রুতার জের ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইয়াকুব আলী ছৈয়াল (৫০) নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চন্দনী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

তার আগে ৫ জুন ভোলায় এক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলায় হাকিম মিজি (৪৫) নামে ওই ইউপি সদস্যকে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ওই দিন সকালে ইউনিয়নের হেতনার হাট এলাকার একটি খাল থেকে হাকিমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে কুপিয়ে জখম করা হলেও গুরুতর অবস্থায় শাহীন নামের কিশোর ভ্যানচালক এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার ওপর হামলার বিষয়টিও সামাজিক মাধ্যম হয়ে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে।

গত ২৮ জুন বিকেলে যাত্রীবেশে কয়েকজন ছিনতাইকারী সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ায় যাওয়ার কথা বলে কিশোর শাহীনের ভ্যানে ওঠে। শাহীন তাদের নিয়ে ধানদিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর ধানদিয়া গ্রামে পৌঁছালে এক পাটক্ষেতের পাশে দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথা কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

ছিনতাইকারী ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে জ্ঞান ফিরে শাহীন কান্নাকাটি শুরু করলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়। এরপর পুলিশের সহায়তায় শাহীনকে খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :