বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে হাইকোর্টের সতর্কতা

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০১৯, ১৫:৩১ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯, ১৫:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বিচার বর্হিভূত হত্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে বলেছে হাই কোর্ট। বরগুনা শহরের সড়কে প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার অগ্রগতির প্রতিবেদন পেয়ে এই নির্দেশ এসেছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে এই মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ।

এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এজাহারভুক্ত পাঁচ জন এবং সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের কথাও হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।

নয়ন বন্ড কীভাবে মারা গেল তা জানতে চায় হাইকোর্ট। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, পুলিশের কাছে গোপন সংবাদ ছিল অত্র মামলা আসামিরা সেখানে অবস্থান করছেন। পুলিশ সেখানে গিয়েছে এবং পুলিশের উপরে প্রথমে অতর্কিতভাবে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তখন পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য পাল্টা গুলি চালালে সেখানে একজন মারা যান।’

এলাকাবাসী ছুটে এসেই নয়ন বন্ডকে শনাক্ত করে বলেও আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। বাসার বলেন, ‘সেখানে তার গ্রুপ ০০৭ এর অন্যান্য সদস্যরা ছিল। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা এবং একটি অস্ত্র আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়গুলি তদন্তাধীন।’

মামলার অগ্রগতি জানানোর পর বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কামরুল কাদের বলেন, ‘আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারবহির্ভুত হত্যা) পছন্দ করি না। হয়ত প্রয়োজনের খাতিরে অনেক সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী তা বাহিনী করে থাকে। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আইন যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেটা যেন নিশ্চিত হয়।’

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বিচারবহির্ভুত হত্যা বা ক্রসফায়ার শুরু হয়। সব ক্ষেত্রেই বর্ণনা একই রকম। সন্দেহভাজন অপরাধীকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে যায়। পথে তার সহযোগীরা আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে নিহত হন সন্দেহভাজন। তবে এই বর্ণনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মানবাধিকার কর্মীরা একে হত্যা বলে আসছেন।

হাইকোর্ট নয়ন বন্ডের মতো ছেলেদের আস্কারা দিয়ে যারা অপরাধী বানিয়েছে, তাদের বিষয়টি নিয়েও কথা বলে। বিচারপতি বলেন, ‘একদিনে এই নয়ন বন্ডরা তৈরি হয় না। কেউ না কেউ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। কেউ না কেউ লালন-পালন করে ক্রিমিনাল বানায়।’

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মহামান্য আদালতের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। এ বিষয়ে সার্বিক অগ্রগতি অবহিত করেছি। এ মামলায় ১২ জন এজাহার নামীয় আসামি আছেন। তার মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নয়ন বন্ড নামে একজন আসামি ঘটনাস্থলে গুলিতে মারা যান।’

গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বরগুনায় রিফাতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের বেঞ্চের নজরে আনেন। সেদিন আদালত আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সতর্কতা জারি করতে বলে। একই সঙ্গে আদালত মামলার অগ্রগতি ৪ জুন জানাতে বলে।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হওয়ার পর তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/বিইউ/ডব্লিউবি