যেভাবে অভিনয়ে এসেছিলেন ধর্মেন্দ্র

বিনোদন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০১৯, ১৫:৫৪

বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। তার ব্যক্তিত্ব মন জয় করে নিয়েছিল সবার। নারী মহলে তাকে নিয়ে চলতো বিশেষ চর্চা। কিন্তু ষাট ও সত্তরের দশকের সুপারহিট নায়ক ধর্মেন্দ্রর বলিউডে আসার পথটা সহজ ছিল না। বিশ্বের অন্যতম বড় এ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়েছিল ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনীর স্বামীকে।

ধর্মেন্দ্র জন্মেছিলেন পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার নাসরালি গ্রামে। তার বাবা ছিলেন শিক্ষক। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি চাইতেন ধর্মেন্দ্র যেন পড়াশোনায় মনোযোগী হন। কিন্ত ছেলের ছোটবেলা থেকেই ছিল অভিনয়ের ঝোঁক। দিলীপ কুমার ও মতিলালের অভিনয় দেখে তিনি অনপ্রাাণিত হন। সিদ্ধান্ত নেন পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বেছে নেবেন।

পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ধর্মেন্দ্রকে রোজগারের জন্য ছোটবেলা থেকেই মাঠে কাজ করতে হতো। তিনি কাবাডি ও হকি খেলতে ভালোবাসতেন। তবে সব থেকে বেশি ভালবাসতেন অভিনয়কে। তাই প্রতিনিয়ত মায়ের কাছে অভিনয়ের কথা বলতেন।

ধর্মেন্দ্র তার মায়ের পরামর্শ মেনেই ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ারের ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি পাঠান এবং প্রতিযোগী হিসেবে নির্বাচিতও হন। নিজের অভিনয়ের প্রতিভাকে প্রমাণ করে তিনি এই প্রতিযোগিতা জেতেন এবং পাঞ্জাব ছেড়ে চিরদিনের জন্য মুম্বাইয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মুম্বাইয়ে গিয়ে ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম হ্যায় তেরে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় ধর্মেন্দ্রর। যদিও তিনি সর্বপ্রথম অভিনয় করেছিলেন বিমল রায়ের ‘বন্দিনী’ ছবিতে। কিন্তু দেরিতে মুক্তি পাওয়া এটি ধর্মেন্দ্রর ষষ্ঠ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ছবিতে অভিনয়ের পর তিনি আবার বেকার হয়ে পড়েন। তার কাছে অধিকাংশ দিনই খাওয়ার কোনো টাকা থাকতো না। না খেয়েই তিনি পরিচালকদের দরজায় ঘুরে বেড়াতেন ছোট কোনও চরিত্রের আশায়।

ধর্মেন্দ্রর সংগ্রামের এই সময়ে বলিউডে তার বন্ধুরা তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। এ কথা স্বীকার করে অভিনেতা বলেন, অভিনয়ের কোনো সুযোগ না পেয়ে তিনি একসময় পাঞ্জাব ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় তাকে আটকান মনোজ কুমার এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

একদিন তিনি এক পরিচালকের সঙ্গে ট্যাক্সি করে আসছিলেন। নামার সময় ধর্মেন্দ্রর ভাড়া দিতে অস্বীকার করেন। এদিকে অভিনেতার পকেটেও নেই ভাড়া দেয়ার মতো টাকা! ওই সময় শশী কাপুর এসে ধর্মেন্দ্রকে উদ্ধার করেন এবং তাকে খাওয়ানোর জন্য নিজের বাড়ি নিয়ে যান।

ধর্মেন্দ্র বরাবরই মনে করেছেন যে, চেহারা তার ইতিবাচক দিকের সঙ্গে নেতিবাচকও। এই চেহারাই তার অভিনয়কে ঢেকে দিয়েছে চিরকাল। পরিচালকরা অভিনয়ের থেকে তার ‘ম্যাচো লুকস্’কেই পর্দায় বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

১৯৬৬ সালে ‘ফুল ও পাথ্থর’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি বলিউডের ‘অ্যাকশন হিরো’ রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর একে একে জীবন মৃত্যু, ইয়াদো কি বারাত, চারাস, চুপকে চুপকে, সীতা অউর গীতা, শোলে, দোস্ত, আজাদ, ডি বার্নিং ট্রেন ইত্যাদি সিনেমা করে বলিউডে পাকাপাকিভাবে নিজের জায়গা করে নেন।

সিনেমায় সফল হলেও ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। ১৯ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন প্রকাশ কাউরকে। এই দম্পতির দুই ছেলে সানি দেওল ও ববি দেওলের কথা সবাই জানলেও তাদের ভজেতা ও অজিতা নামে দুটি মেয়েও আছে। বিবাহিত হলেও তিনি প্রেমে পড়েন ড্রিমগার্ল হেমা মালিনীর।

হেমা মালিনীকে বিয়ে করার জন্য তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে তিনি কিন্তু আজও তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি। হেমা মালিনী ও তার দুই মেয়ে এশা ও অহনা দেওল। তিনি নিজের ছয় সন্তানের প্রতিই দায়িত্ব পালন করেছেন। আলাদা থাকার কারণে দায়িত্ব থেকে সরেননি।

২০০৪ সালে ধর্মেন্দ্র ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে রাজস্থানের বিকানেরে ভোটে দাঁড়ান এবং সাংসদ নির্বাচিত হন। তার নিজস্ব প্রোডাকশন হাউসও রয়েছে। ‘আপনে’, ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’র মত সিনেমা তার প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।

পদ্মভূষণ বিজয়ী এই প্রবীণ অভিনেতা আজও তার চেহারা ও অভিনয়ে হার মানাতে পারেন বলিউডের বড় বড় তারকাদের। বয়স হলেও তিনি অভিনয় থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে আসেননি। তার ইচ্ছা, ভালো চরিত্র পেলে তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অভিনয় চালিয়ে যাবেন।

ঢাকাটাইমস/৪ জুলাই/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :