বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব?

খলিল আহমেদ
 | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪৯

প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে দেশকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে উন্নত করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতের সব পর্যায়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভালো শিক্ষকের অভাব। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষকের মারাত্মক সংকট রয়েছে। একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থায় যা যা থাকা দরকার আমাদের তাতে ঘাটতি আছে। আমাদের সন্তানেরা শিশুকালে তাদের সামনে অনুকরণীয় মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মেন্টারের অভাব দেখতে পাচ্ছে। এ কারণেই সমাজে ক্রমান্বয়ে নৈতিকতার অবনতি হচ্ছে এবং আত্মমর্যাদাবোধের বিকাশ ঘটছে না।

আত্মমর্যাদাবোধহীন বাংলাদেশি ক্রমবর্ধমান হারে প্রবাসে অমর্যাদাকর কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের ভাবমূর্তি কী পরিমাণে ক্ষুণ্ন করছে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। শিক্ষার ব্যয় বেড়ে গেছে এবং স্কুল শিক্ষা প্রায় বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। আমরা সর্বজনীন শিক্ষায় গুরুত্ব না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ খাতে সরকারি ব্যয় অধিক ব্যয় বরাদ্দের চেষ্টা করছি। মানসম্মত শিক্ষকের ব্যবস্থা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে করতে পারলে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ অচিরেই গড়তে করতে সক্ষম হবো।

আমরা এখনই মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করতে পারব না। মানসম্মত শিক্ষকের অভাব পূরণের জন্য স্কুল পর্যায়ের বিষয়গুলোর প্রতিটি অধ্যায়ের ওপর কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকের দ্বারা লেকচার তৈরি করা যেতে পারে। লেকচারগুলো ভিডিও ক্লিপগুলো আকারে শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হলে সার্বিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। এই ভিডিওতে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অন্তর্নিহিত শিক্ষার উদ্দেশ্য অভিজ্ঞ প্রমিত উচ্চারণে সক্ষম এমন শিক্ষকের সহায়তায় প্রাঞ্জল এবং আনন্দময় উপস্থাপনার ব্যবস্থা করতে হবে।

উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি অবলোকন করে শিশুদের দেশপ্রেম জাগ্রত হবে এবং মানুষের প্রতি মমত্ববোধ গড়ে উঠবে। ভিডিও ক্লিপগুলো বিটিভির মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে। এই মডেল চালু করা হলে ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবক সবাই উপকৃত হবে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যাবে।

যা যা পরিবর্তন হতে পারে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো

*ছাত্র-ছাত্রী মানসম্মত শিক্ষা পাবে; * শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে; * শিক্ষকরা প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে; * সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পাবে; *শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যয় কমে যাবে; * কোচিং বন্ধ হবে; * কোচিংয়ের কুপ্রভাব থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মুক্তি পাবে; * শিক্ষকদের বদলির প্রবণতা কমে যাবে; *অভিভাবকদের শিক্ষা ব্যয় কমে যাবে; * ধনী-দরিদ্র শিক্ষার সমান সুযোগ পাবে; *প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না; *নামকরা স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রতিযোগিতা থাকবে না; *অবৈধ গাইড বইয়ের ব্যবহার বন্ধ হবে; *বিদেশ থেকে শিক্ষক আমদানির প্রয়োজন হবে না; * উচ্চ শিক্ষিতদের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের চাহিদা সৃষ্টি হবে; * মাদ্রাসাসহ সব ধরনের শিক্ষায় শিশুকাল থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানো যাবে।

* কম্পিউটার শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে হয়ে যাবে; * গ্রাম থেকে শহরে মাইগ্রেশন কমে যাবে; *শহরে যানযট কমে যাবে; * গ্রাম শহরে রূপান্তরিত হবে; *আইনশৃঙ্খলা খাতে সরকারি ব্যয় কমে যাবে; *সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অধিক সংখ্যায় শিক্ষিত কর্মী পাবে; *আগামী ১৫ বছর পর কোনো আঞ্চলিক ভাষাভাষী প্রাপ্তবয়স্ক লোক পাওয়া যাবে না; *শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমবে এবং পরোপকারী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে; *মডেলটি শিক্ষায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে; *ভবিষ্যতে মডেলটি বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে মডেলটির বাস্তবায়ন একদিন হবে এই প্রত্যাশায় রইলাম।

লেখক: যুগ্ম সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :