বাংলাদেশকে শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিলেন ওয়ালশ

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০১৯, ১০:০১

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

চুক্তির মেয়াদ শেষ।বাংলাদেশের বোলিং কোচ হিসেবে আর থাকছেন না তিনি। ইংল্যান্ডে কটা দিন বিশ্রাম করে ফিরে যাবেন দেশে। কেমন কাটালেন বাংলাদেশ পর্ব? ওয়ালশ বলেছেন, দুর্দান্ত। 

সাকিব, মুস্তাফিজ়ুর রহমানদের নিয়ে গর্বিত তিনি। গর্বিত বাংলাদেশ দল নিয়ে। বিদায়ের আগে শুভকামনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আরও অনেক কথাই বলেছেন ফাস্ট বোলিং গ্রেট ওয়ালশ। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ এ বারের বিশ্বকাপে সকলের হৃদয় জিতে নিয়েছে। আপনি কী বলবেন?

কোর্টনি ওয়ালশ: আমি খুশি। ছেলেরা ভাল ক্রিকেট খেলেছে। জেতার খিদে দেখিয়েছে, তীব্রতা দেখিয়েছে। আর সেই মনোভাবের প্রতিফলনই ঘটছিল আমাদের পারফরম্যান্সে। আমি সব চেয়ে খুশি ধারাবাহিকতা দেখে। হয়তো আমরা সেমিফাইনালের টিকিট অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু গোটা বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভাবে ভাল ক্রিকেট খেলে গিয়েছে বাংলাদেশ।

প্র: সাকিব-আল-হাসানকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ক্রিকেট দুনিয়া। আপনিও নিশ্চয়ই খুব খুশি?

ওয়ালশ: বিশ্বকাপের ইতিহাসে আমার দেখা সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটা করে দেখাল সাকিব। এত ধারাবাহিকতা ক’জন দেখাতে পেরেছে বিশ্বকাপে? চলতি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ স্কোরারও ছিল শাকিব। দু’টো সেঞ্চুরি, পাঁচটা হাফ সেঞ্চুরি। কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট হবে না শাকিবের জন্য।

প্র: বিশ্বকাপের চার সেমিফাইনালিস্ট ঠিক হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজ়িল্যান্ড। এই চার দলের মধ্যে কাকে বেশি শক্তিশালী লাগছে?

ওয়ালশ: সেমিফাইনালের চারটে টিমের মধ্যে আলাদা করে কাউকে বেছে নেওয়া কঠিন। কাগজেকলমে তিনটে দল বেশি করে সকলের নজরে রয়েছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড। সে দিক দিয়ে বলতে গেলে নিউজ়িল্যান্ড সেমিফাইনালের লড়াইয়ে কিছুটা ডার্ক হর্স হিসেবে শুরু করবে। ভারতকে হারানোর পরে ইংল্যান্ড আবার চনমনে হয়ে উঠেছে। ওরা ভাল ক্রিকেট খেলছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, ভারত আর অস্ট্রেলিয়াই ফাইনালে খেলবে।

প্র:  মুস্তাফিজের রহমানের অগ্রগতি দেখেও নিশ্চয়ই আপনি খুশি?

ওয়ালশ: খুবই খুশি। মুস্তাফিজ়ুর বিশেষ এক প্রতিভা। চোট-আঘাতে ভুগছিল। আমি বিশ্বকাপের আগে বলেছিলাম, ফিট মুস্তাফিজ়ুরকে আমাদের দরকার। বিশ্বকাপে এসে পুরো শক্তি লাগিয়ে বল করতে পারছিল মুস্তাফিজ়ুর। আমি ওকে প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম, জন্মগত প্রতিভা। সেই কারণে কখনও ওর সহজাত ধরনকে পাল্টানোর চেষ্টা করিনি। মুস্তাফিজ়ুরের জীবনে আরও অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত অপেক্ষা করছে।

প্র: ভারতের সঙ্গে হারার পরে কি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন?

ওয়ালশ: না, আমি হতাশ হইনি। সব সময়ই আমি বরং এটা ভেবে খুশি হয়েছি যে, ছেলেরা ভাল ক্রিকেট খেলেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ভারতের সঙ্গে ম্যাচটাতেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি আমরা। এই বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের এটাই শিক্ষা। জেতার কাছাকাছি এসেও আমরা জিততে পারিনি। এই অন্তিম ধাপটা পেরনো শিখতে হবে।

প্র: চলতি বিশ্বকাপে কোন ফাস্ট বোলারদের ভাল লাগল?

ওয়ালশ: মিচেল স্টার্ক দারুণ বল করছে। অস্ট্রেলিয়ার এই ধারাবাহিকতার কারণ স্টার্ক। ইংল্যান্ডের জোফ্রা আর্চার আর মার্ক উডকে আমার ভাল লেগেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেমার রোচ দেখাল, এখনও ওর মধ্যে অনেক ক্রিকেট অবশিষ্ট আছে। আর ভাল লেগেছে ভারতের বুমরা এবং বাংলাদেশের মুস্তাফিজ়ুর রহমানকে।

প্র: সকলের হৃদয় জিতে নিয়েও কেন পারল না বাংলাদেশ?

ওয়ালশ: আমরা কতগুলো প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে দারুণ লড়াই করেও হেরে গেলাম। কাছাকাছি এসেও পারলাম না শেষ ধাপটা জয় করতে। সেই কারণেই সম্ভবত সেমিফাইনাল শুরুর আগে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে গেল। আশা করব, এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট।

প্র: আর আপনার নিজের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ? অনেক আশা জাগিয়ে এসেও কি হতাশ করল?

ওয়ালশ: আমাদের দেশের ক্রিকেট ভক্তরা এ বার স্বপ্ন দেখছিল। কারণ, টিমটা সত্যিই ভাল ছিল। ম্যাচ জেতানোর মতো অনেক ক্রিকেটার ছিল এ বারের দলে। তাই আর একটু ভাল পারফরম্যান্সই সকলে আশা করেছিল হয়তো। খেলোয়াড় এবং কর্তাদের এখন সৎ ভাবে বিশ্বকাপের ময়নাতদন্ত করতে হবে। কেন ভাল দল নিয়েও পারলাম না, সেই বিশ্লেষণটা জরুরি। তবে ইতিবাচক মনোভাব ছাড়লে চলবে না।

প্র: আপনার এখন পরিকল্পনা কী?

ওয়ালশ: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আমার চুক্তি ছিল বিশ্বকাপ পর্যন্তই। সেটা শেষ হয়ে গেল। এর পর কয়েক দিন বিশ্রাম নেব আমি। টানা অনেক দিন ধরে ছুটছি। বিশ্রাম নিয়ে তার পরে ভাবব, আমার পরবর্তী ঠিকানা কী হবে।

প্র: তার মানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে আর থাকছেন না?

ওয়ালশ: না, চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার বাড়ি ফেরার পালা। ইংল্যান্ডে কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাব জামাইকায়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। দুর্দান্ত একটা সময় আমি কাটিয়ে গেলাম। দারুণ সব ছেলেকে পেয়েছি। দুর্দান্ত সব প্রতিভা দেখেছি। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে ক্রিকেট মাঠে অনেক গৌরবই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।

(ঢাকাটাইমস/৭ জুলাই/ডিএইচ)