আল্লাহ মাঝে মাঝে ডাক্তাররূপে ফেরেশতাদের পাঠান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ওঙ্কোলজি বিভাগের প্রফেসর তিনি। শুক্রবারে মাঝে মাঝে ঢাকায় রোগী দেখতে আসেন। সকালের ফ্লাইটে ঢাকা এসে রাতের ফ্লাইটে চট্টগ্রাম ফেরত যান।

গত শুক্রবার, সকাল ৯টা ১৫-তে ইউএস বাংলার এক ফ্লাইটে তার টিকেট কাটা। ঘুম থেকে উঠে সকাল সাতটায় খবর পেলেন বাস এক্সিডেন্টে দুই কিশোর মারাত্মক যখম নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আছে। তাদের সাথে তাদের আরও আট অসহায় কিশোর।

তিনি হাত ব্যাগ গুছিয়ে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে মেডিকেলের জরুরি বিভাগে গিয়ে তদারকি শুরু করেন। এক কিশোরের অবস্থা বেশি খারাপ। তার মুখে, হাতে, কপালে, গলায়, বুকে অনেকগুলো কাচের টুকরা ঢুকে আছে। বাম হাতের আঙ্গুলের কাছ থেকে প্রায় দুই ইঞ্চি মাংস কাটা পড়েছে। দুটো ট্যান্ডন ছিড়ে গেছে। তার বিমান তাকে ছেড়েই চলে যায় ঢাকায়, তার টিকেট বাতিল হয়।

এর মধ্যে সেলাইসাবুদের কাজ আর কোনোমতে ঢাকায় নিয়ে যাবার জন্য হাতের মারাত্মক ইনজুরিতে ড্রেসিং করতে করতে বেজে যায় বেলা দশটা। তিনি নিজের দায়িত্বে দশ কিশোরসহ নিজের টিকেট কাটেন ইউএস বাংলার সাড়ে এগারোটার ফ্লাইটে। নিজেই ব্যবস্থা করেন সবচেয়ে ভালো দুটো অ্যাম্বুলেন্স যেটাতে করে দুই আহতকে বিমান বন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়।

বিমানে ওঠার আগে বিড়ম্বনা। তিনি নিজের পরিচয় দেন। তাতেও কাজ হয় না। তার সামনে একটা ফর্ম নিয়ে আসা হয়, সেখানে তার সই করতে হবে। তিনি কোনো কিছু না পড়ে সই করে দেন।

আজ কিছুক্ষণ আগে কথা হলো অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ ইউসুফের সাথে। বিমান বন্দরে সেদিন এসব কিছু আলাপ হয়নি, শুধু কোথায় কিভাবে কী কী চিকিৎসা হবে তার বয়ান দিয়েছেন মাত্র। আজ তিনি নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে শুনলেন ইবন হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়েছে। আর বললেন, জানেন, সেদিন আমি কী বন্ডে সই দিয়েছিলাম? আমি বলি, জানি না।

তিনি বলেন- সেখানে নাকি লেখা ছিল যে, এই রোগীয় কারণে যদি বিমানকে চট্টগ্রাম ফেরত আসতে হয়, তবে এর সম্পূর্ণ খরচ আমাকে দিতে হবে।

তিনি আরও বললেন, আমি চিন্তা করেছি, আমার ছেলের যদি এমন হতো, আমি তো বন্ড দিয়েই নিতাম, তাহলে আপনার ছেলের জন্য দেবো না কেন? ডা. সাজ্জাদ ইউসুফ আল্লাহ মাঝে মাঝে ডাক্তাররূপে ফেরেশতাদের পাঠান।

লেখক: নাট্যকার, ভ্রমণকাহিনি লেখক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা