ভিক্ষুক গৃহকর্মী সবজি বিক্রেতার সন্তান পেলেন পুলিশে চাকরি

পাবেল খান চৌধুরী
 | প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৫

মাত্র ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট জমা দেয়ার বিনিময়ে সরকারি শিশু পরিবারের এতিম দুজন, চা-শ্রমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ভিক্ষুক, রাজমিস্ত্রি, টিউবওয়েল মিস্ত্রি, আইসক্রিম, সবজি, কলা বিক্রেতা, বর্গাচাষি, মুক্তিযোদ্ধা, গৃহপরিচারিকার সন্তানরা পেলেন পুলিশে চাকরি। অন্যের জামাকাপড় ধার করে ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত হওয়া কাজের বুয়ার দুই মেয়ে আছেন তাদের মধ্যে।

সম্প্রতি হবিগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা। আর এ পরীক্ষায় নিয়োগের ব্যাপারে সততা ও স্বচ্ছতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম)। তার অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ছিল না কোনো ধরনের অন্যায় তদবির, হয়নি কোনো টাকা লেনদেন। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় কনস্টেবল পদে চাকরি লাভ করেছেন ৯৭ জন।

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের ফুল দিয়ে বরণ করেন পুলিশ সুপার। এ উপলক্ষে আজ সোমবার হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনে প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি।

পুলিশ সুপার বলেন, কনস্টেবল পদে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের কারো বাবা কৃষক, কারো বাবা শ্রমিক, কারো বাবা আইসক্রিম বিক্রেতা, কলা বিক্রেতা, কারো বাবা রাজমিস্ত্রি, টিউবওয়লে মিস্ত্রি, সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশু, চা-শ্রমিকের সন্তান, কারো বিধবা মা গৃহপরিচারিকার কাজ করে সন্তানকে মানুষ করেছেন। কেউ নিজে টিউশনি করে বা শ্রমিকের কাজ করে বা ভ্যান চালিয়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে লেখাপড়া করেছেন। কারো কারো অভিভাবক হয়তোবা ছোট চাকরি বা ব্যবসা করে সন্তানকে বড় করেছেন। এরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও মেধার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। এদের চোখে আছে দেশসেবার স্বপ্ন। এরা অদম্য। শত বাধার মুখেও এরা এগিয়ে যেতে চায়। এরা প্রধানমন্ত্রীর ব্রত সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হতে চায়।’

২০১৯ সালে হবিগঞ্জ জেলা থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয় ৯৭ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল। গত ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার পথপরিক্রমা পাড়ি দিয়ে এরা মনোনীত হয়েছে।

বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আগত ২ জন পর্যবেক্ষক, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা থেকে আগত ২ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের শ্রম, ধৈয্য ও মেধার ফসল মনোনীত প্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজির প্রেরণা আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’ তিনি এ জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে মেধা, যোগ্যতা, ন্যায় ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন কর্মস্থলে দেশের সাধারণ নাগরিকদের তারা যেন ন্যায় ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে সেবা প্রদান করেন। যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বাগ গ্রামের মৃত দুর্গা চরন দেব ও গৃহপরিচারিকা বাসন্তি রাণী দেবের দুই কন্যা রুনা রানী দেব ও রিমা রানী দেব। তারা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের লোক।

এ ছাড়া চুনারুঘাট উপজেলার আব্দুর রহিমপুর গ্রামের অন্ধ কদ্দুছ আলীর ছেলে সুমন আহমেদসহ দুজন এতিম যুবককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিযোগপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা পুরুষ, ২৯ জন সাধারণ পুরুষ, অন্যান্য কোটায় ৯ জন নিয়োগ পেয়েছেন। নারী কন্সস্টেবলদের মধ্যে ৩৪ জন সাধারণ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪ জন, অন্যান্য কোটায় ১ জন রয়েছে। মোট ৯৭ জনকে নিয়াগ দেয়া হয়।

এ সময় সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত কনস্টেবল ও তাদের অভিভাবকরা প্রধানমন্ত্রীসহ পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এখলাছুর রহমান প্রমুখ।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ, সাংবাদিক ও নিয়োগপ্রাপ্ত কন্সস্টেবলদের অভিভাবকরা।

(ঢাকাটাইমস/৮জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :